যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলা সম্প্রতি একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে যে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে অন্তত ৫৮ জন মানুষ নিহত হন। ঘটনাটিকে ঘিরে নতুন কিছু ভিডিও, অডিও এবং সিসিটিভি ফুটেজ তাদের হাতে এসেছে। এই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ‘প্রাণঘাতী শক্তি’ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন।
প্রতিবেদনের কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন মিরাজ হোসেন নামে এক ব্যক্তি, যিনি নিজেই ওইদিন পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তার মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিও বিবিসির হাতে আসে পরিবারের মাধ্যমে। মেটাডেটা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গুলিবর্ষণ শুরু হয়েছিল দুপুর ২টা ৪৩ মিনিটে। ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীদের সামনে সেনাবাহিনীর একটি দল দাঁড়িয়ে থাকলেও, তারা হঠাৎ সরে গেলে যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ সদস্যরা ফটকের সামনে থাকা জনতার ওপর গুলি চালায়।
একটি ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গুলির শব্দ শোনা মাত্রই বিক্ষোভকারীরা প্রাণ বাঁচাতে গলির ভেতর পালাতে থাকেন। আরেকটি ভিডিওতে আহতদের ওপর পুলিশকে লাথি মারতে দেখা যায়। আগের দিনের (৪ আগস্ট) ভিডিওতে পুলিশের মহাসড়কে গুলি চালানোর দৃশ্যও ধরা পড়ে।
বিবিসির অনুসন্ধান অনুযায়ী, যাত্রাবাড়ী থানার সামনে ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে গুলি চালানো হয়। ড্রোন ভিডিও বিশ্লেষণে রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহ ও আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টার চিত্র উঠে আসে। বিক্ষোভকারীরা পরবর্তী সময়ে শাহবাগের দিকে চলে গেলেও, যাঁরা থেকে গিয়েছিলেন, তাঁদের একটি অংশ থানা ভবনে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে পুলিশ বাহিনীর ছয়জন সদস্য নিহত হন।
প্রথমদিকে নিহতের সংখ্যা ৩০ বলা হলেও, সংবাদ প্রতিবেদন, হাসপাতাল নথি এবং নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পর বিবিসি জানায়, প্রকৃত সংখ্যাটি ৫৮ জন। এর মধ্যে সাধারণ মানুষ ও পুলিশ—উভয়ই ছিলেন।
ঘটনার সময় সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, তাদের পক্ষ থেকে বিবিসিকে কোনো মন্তব্য জানানো হয়নি। তবে আরও আলোচনার জন্ম দিয়েছে একটি ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপ, যেখানে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথোপকথনে শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর শোনা যায় বলে দাবি করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ ও আন্তর্জাতিক অডিও ফরেনসিক প্রতিষ্ঠান ইয়ারশট—দুজনেই অডিওটির সত্যতা মেনে নিয়েছে।
৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীর ঘটনার সময়ের প্রেক্ষাপটে ও রাজনৈতিক পরিণতি বিশ্লেষণ করলে এটি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত সহিংস রাজনৈতিক ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।