উপকূলজুড়ে এখন আমন ধান আবাদের ধুম পড়েছে। কৃষকেরা মাঠে ধানের আবাদ নিয়ে মহাব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে মৌসুমের শুরুতে টানা বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনেক কৃষকের বীজতলার চারা নষ্ট হয়ে যায়। এই সংকট মোকাবিলায় পিরোজপুরের কাউখালীতে গড়ে ওঠা ভাসমান আমন ধানের চারা বিক্রির হাট এখন কৃষকদের প্রধান ভরসা হয়ে উঠেছে।
সন্ধ্যা নদীতীরবর্তী কাউখালীর দক্ষিণ বন্দর এলাকার চিরাপাড়া সেতুর পাশে সপ্তাহে দুই দিন—শুক্রবার ও সোমবার—এই হাট বসে। ভোর থেকে শুরু হওয়া হাটে শত শত নৌকায় করে কৃষকেরা আমন চারা নিয়ে আসেন। কয়েক লক্ষাধিক টাকার চারা বিক্রি হয় এই হাটে। প্রতি পোন (৮০ মুঠো) চারা বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে ১৮০০ টাকায়। কৃষকদের মতে, গত বছরের তুলনায় এবার দাম অনেকটা কম।
স্থানীয় কৃষক আবুল কালাম জানান, “গত বছর একই চারা পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, এবার সেই চারা দেড় হাজার টাকার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে।” নাজিরপুরের কৃষক আব্দুস সোবহান বলেন, “নিজে বীজতলা তৈরি করতে সময় ও খরচ দুটোই বেশি লাগে। কিন্তু এই হাট থেকে চারা কিনলে সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হয়।” ঝালকাঠীর কৃষক মৃণাল কান্তি রায় জানান, বর্তমানে শ্রমিক সংকট ও উচ্চ মজুরির কারণে চারা কিনে জমিতে রোপণ করাই সাশ্রয়ী।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, কাউখালী অঞ্চলের জমি উঁচু ও নদীবেষ্টিত হওয়ায় এখানে জলাবদ্ধতা হয় না। ফলে এখানকার বীজতলা অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ভালো থাকে। পিরোজপুর, বাগেরহাট, বরগুনা, ঝালকাঠিসহ আশপাশের জেলার কৃষকেরা তাই এখানে ভিড় জমাচ্ছেন।
কাউখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সোমা রানী দাস বলেন, “এখানকার কৃষকেরা জমিতে একাধিকবার আমন বীজতলা তৈরি করতে পারেন। এ বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫ লাখ টাকার চারা বিক্রি হয়েছে।” উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার হালদার জানান, “আগামী আরও ১৫ দিন এই হাটে চারা বিক্রি চলবে। আমাদের কর্মকর্তারা প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষকদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাউখালীর এই ভাসমান বীজতলার বাজার শুধু স্থানীয় কৃষকদের নয়, বরং আশপাশের অঞ্চলের কৃষি উৎপাদনেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।