ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পরিচালিত ধারাবাহিক উন্নয়ন কার্যক্রমে দ্রুত বদলে যাচ্ছে গ্রামীণ জনপদ। উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং জনসেবামূলক অবকাঠামোর দৃশ্যমান উন্নয়ন ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষের জীবনমানকে আরও উন্নত করেছে। দীর্ঘদিন অবহেলিত ও চলাচলের অযোগ্য সড়কগুলো নতুন করে সংস্কার হওয়ায় যোগাযোগব্যবস্থায় এসেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন।
একসময় উপজেলার গ্রামীণ সড়কগুলো ছিল ভাঙাচোরা এবং দুর্ঘটনা-প্রবণ। জোড়াতালি দিয়ে চলা রাস্তাগুলো বর্ষায় কাদায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ত। কিন্তু এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী সৈয়দ শাহরিয়ার আকাশের তত্ত্বাবধানে বর্তমানে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হচ্ছে।
উপজেলার আলাইপুর ক্লাব মোড় থেকে চিত্রা নদী পর্যন্ত ৯১০ মিটার, শাহাপুর ঘিঘাটি থেকে বড় ঘিঘাটি পর্যন্ত ৮৯০ মিটার এবং দুলালমুন্ডিয়া বাজার থেকে ছোট শিমলা পর্যন্ত ১,৬৩০ মিটার সড়কের উন্নয়ন ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এসব সড়ক সংস্কারের ফলে স্থানীয় মানুষের যাতায়াতে স্বস্তি ফিরেছে এবং যানবাহন চলাচল হয়েছে আরও সহজ।
এছাড়া ঝিনাইদহ জেলা গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় তত্তিপুর মডার্ণ ব্রিক্স থেকে পুকুরিয়া পর্যন্ত ১,০৯০ মিটার, বারফা থেকে পরানপুর, এবং তালসার থেকে কাশিপুর পর্যন্ত ২,৫৪১ মিটার দীর্ঘ সড়কের সংস্কার কাজও শেষ হয়েছে। কৃষি, পণ্য পরিবহন এবং দৈনন্দিন যাতায়াতে এসব সড়ক স্থানীয় মানুষের ভোগান্তি অনেক কমিয়েছে।
ওয়েস্টার্ন ইকোনোমিক করিডোর অ্যান্ড রিজিওনাল এনহ্যান্সমেন্ট প্রোগ্রাম (উইকেয়ার) প্রকল্পের অধীনে সাদিকপুর ত্রিমোহনী থেকে আড়পাড়া বাজার পর্যন্ত ৪,২৪৩ মিটার এবং বেথুলি হাই স্কুল থেকে কোলা জিসি পর্যন্ত ৪,৭০০ মিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ কাজ চলছে। এসব সড়ক কালীগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নের সঙ্গে যোগাযোগ আরও সুদৃঢ় করবে।
রুরাল কানেক্টিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় কাশিপুর বাজার থেকে বালিয়াডাঙ্গা জিসি পর্যন্ত ৪,০০০ মিটার সড়ক নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ায় স্থানীয়দের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে এবং যোগাযোগব্যবস্থায় যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা।
এলজিইডির উন্নয়ন শুধু সড়কেই সীমাবদ্ধ নয়। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় আড়পাড়া শিবনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারতলা ভবন, বেজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুইতলা ভবন এবং মনোহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। এসব প্রকল্পে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা। এগুলো নির্মিত হলে শিক্ষার্থীরা আরও উন্নত পরিবেশে পড়াশোনা করার সুযোগ পাবে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “আগে রাস্তাগুলো ভাঙাচোরা ছিল, মালামাল আনা-নেওয়া ছিল অনেক কষ্টকর। এখন রাস্তা ভালো হওয়ায় সময় বাঁচছে, খরচও কমেছে।”
স্থানীয় বাসিন্দা রহিমা খাতুন জানান, “বৃষ্টি হলেই বাচ্চাদের স্কুলে নেওয়া যেত না। নতুন রাস্তা হওয়ায় এখন আর ভোগান্তি নেই।”
উপজেলা প্রকৌশলী সৈয়দ শাহরিয়ার আকাশ বলেন, “মানসম্মত অবকাঠামো নির্মাণই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। প্রতিটি প্রকল্প নিয়মিত তদারকি করছি, যাতে দ্রুত সম্পন্ন করা যায়। উন্নয়নকাজগুলো শেষ হলে কালীগঞ্জের যোগাযোগে বড় পরিবর্তন আসবে এবং মানুষের দীর্ঘদিনের কষ্ট কমবে।”
কালীগঞ্জ উপজেলার এই উন্নয়নচিত্র গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে এলজিইডির সক্ষমতা এবং স্থানীয় উন্নয়নে সরকারের প্রতিশ্রুতি আরও সুদৃঢ়ভাবে তুলে ধরছে।