চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশি কোম্পানির কাছে হস্তান্তরের বৈধতা নিয়ে দায়ের করা রিট আবেদনের ওপর বিভক্ত রায় দিয়েছেন হাইকোর্টের দুই বিচারপতি। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ফাতেমা নজীব চুক্তি প্রক্রিয়াকে অবৈধ ঘোষণা করে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কনটেইনার টার্মিনাল হস্তান্তরের উদ্যোগ নেওয়ার আইনি কর্তৃত্ব নেই। তাঁর মতে, এই প্রক্রিয়া সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতিমালা লঙ্ঘন করে পরিচালিত হয়েছে। তাই জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করা হলো।
অন্যদিকে কনিষ্ঠ বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ার রায়ে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, রিট আবেদনটি অপরিপক্ব। কারণ সরকার এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি; ফলে আবেদনকারীর রিট করার এক্তিয়ারও নেই। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্রীয় নির্বাহী কার্য পরিচালনার পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তাই তিনি জারি করা রুল খারিজ করে দেন।
বিভক্ত রায় ঘোষণার পর মামলার নথি প্রধান বিচারপতির দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আইনজীবীরা জানান, প্রধান বিচারপতি এখন তৃতীয় বেঞ্চ নির্ধারণ করবেন, যিনি বিষয়টি চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি করবেন।
রিটকারী পক্ষের কৌঁসুলি ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, রিটের বিষয়টি এখনো বিচারাধীন। চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত সরকার এনসিটি হস্তান্তর নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিলে তা অন্যায্য হবে। কারণ বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি রুল যথাযথ ঘোষণা করে আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন। তাই সরকারের অপেক্ষা করা উচিত।
গত ২৬ এপ্রিল এক পত্রিকায় প্রকাশিত "নিউমুরিং টার্মিনালে সবই আছে, তবু কেন বিদেশির হাতে যাচ্ছে"—শিরোনামের প্রতিবেদন যুক্ত করে এ রিট করেন বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন। রিটে দাবি করা হয়, দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের কাছে এনসিটি হস্তান্তর করা হলে তা পিপিপি আইন, ২০১৫ এবং পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়ন নীতিমালা, ২০১৭ লঙ্ঘন করবে।
গত ৩০ জুলাই হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চান—কেন এই চুক্তি প্রক্রিয়াকে স্বেচ্ছাচারি ও আইনবহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না। একই সঙ্গে কেন পিপিপি আইনের আওতায় সুষ্ঠু ও প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হবে না—তাও জানতে চাওয়া হয়।
রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, এম মাহবুবউদ্দিন খোকন, আহসানুল করিম ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এম. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। দীর্ঘ শুনানি শেষে হাইকোর্ট বৃহস্পতিবার বিভক্ত রায় দেন।