পিরোজপুরের নেছারাবাদে এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক হঠাৎ করেই ৩৪০ ফুট সুউচ্চ বৈদ্যুতিক টাওয়ারের চূড়ায় উঠে গিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেন। দীর্ঘ সময় টাওয়ারের উপরে অবস্থান করায় একদিকে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, অন্যদিকে হাজারো মানুষ হতবাক হয়ে ঘটনাস্থলে ভিড় জমায়।
ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) সকালে উপজেলার স্বরূপকাঠি পৌরসভার বিদ্যুৎ বিভাগের নির্মিত টাওয়ারে। মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক শংকর বেপারী বাহাদুর (৪০) উপজেলার সমুদয়কাঠি ইউনিয়নের দুর্গাকাঠি ওয়ার্ডের মৃত নিকুঞ্জ বেপারীর ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, সকালে সবার অগোচরে শংকর বেপারী বৈদ্যুতিক মেইন লাইনের পারাপারের জন্য নির্মিত টাওয়ারে ওঠেন। প্রথমে তাকে নামতে বলা হলেও তিনি আরও উপরে উঠে টাওয়ারের চূড়ায় পৌঁছে যান। দুপুরে খবর পেয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার চেষ্টা চালালেও উপযুক্ত সরঞ্জাম না থাকায় ব্যর্থ হয়। অবশেষে স্থানীয় চার সাহসী যুবকের দুঃসাহসিক চেষ্টায় তাকে জীবিত অবস্থায় নিচে নামানো সম্ভব হয়।
শংকর বেপারীর মা আলো রানী বেপারী জানান, ছোটবেলা থেকেই তার ছেলে মানসিকভাবে অসুস্থ এবং অস্বাভাবিক আচরণ করত। হঠাৎ ঘরে না দেখে অনেক খোঁজাখুঁজির পর টাওয়ারে ওঠার খবর পান। ছেলেকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেয়ে তিনি স্থানীয় যুবক ও উদ্ধারকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
নেছারাবাদ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ইনচার্জ মনিরুল ইসলাম বলেন, “এত বড় সুউচ্চ টাওয়ার থেকে উদ্ধারের জন্য আমাদের পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ছিল না। স্থানীয় যুবকদের সহায়তায় আমরা তাকে নিরাপদে নামাতে পেরেছি।”
নেছারাবাদ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. বনি আমিন জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক টাওয়ারে ওঠার কারণে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তবে যুবকদের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
পল্লী বিদ্যুতের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. জানে আলম বলেন, “ঘটনার পর টানা পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়েছে। এতে মানুষের ভোগান্তি বাড়লেও যুবককে অক্ষত অবস্থায় নামানো গেছে।”
নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে উদ্ধার তদারকি করেন। তিনি বলেন, “স্থানীয় চার যুবকের দুঃসাহসিক প্রচেষ্টায় প্রাণে বেঁচে গেছে ওই যুবক। তাদের এ সাহসিকতার জন্য আমি অফিসে ডেকে ধন্যবাদ জানিয়েছি ও পুরস্কৃত করেছি।”
এ ঘটনায় এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে এবং উদ্ধারকারী চার যুবককে এখন স্থানীয়ভাবে নায়ক হিসেবে দেখা হচ্ছে।