পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে সিজারিয়ান অপারেশনের মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যেই কৃষ্ণা রানী (২২) নামের এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে— ক্লিনিকের অব্যবস্থাপনা, চিকিৎসকের গাফিলতি এবং জরুরি সেবা প্রদানে অক্ষমতার কারণেই এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
মারা যাওয়া কৃষ্ণা রানী দেবীগঞ্জ উপজেলার দেবীডুবা ইউনিয়নের প্রেমবাজার এলাকার ধর্ম নারায়ণের স্ত্রী। চার বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। বুধবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে দেবীগঞ্জ পৌর শহরের করতোয়া সেতু টোলপাড় সংলগ্ন দেবীগঞ্জ স্কয়ার ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কৃষ্ণার সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়।
জানা গেছে, কৃষ্ণা রানীর আগে থেকেই হালকা শ্বাসকষ্ট ছিল, তবে গর্ভকালীন তেমন কোনো জটিলতা ছিল না। বিকেল ৩টার পর অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হলে ডা. শিখা মনি অপারেশনটি সম্পন্ন করেন। অপারেশনের মাধ্যমে কৃষ্ণা কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু অপারেশনের পরপরই তার শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়।
পরিবারের দাবি, রাত ২টা পর্যন্ত ক্লিনিকে রাখার পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে রংপুর নেওয়ার পথে নীলফামারীতে পৌঁছানোর আগেই মৃত্যু হয়।
কৃষ্ণার শাশুড়ি কনিকা রায় বলেন, “অপারেশনের পর থেকেই বউমার বুক ধড়ফড় করছিল, পা ব্যথা করছিল। আমি বারবার ডাক্তার ডাকলেও কেউ আসেননি, শুধু নার্স এসে দেখে যাচ্ছিল। স্যালাইন ও ইনজেকশন দিচ্ছিল, কিন্তু কোনো উন্নতি হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “আমার বউমার সন্তান হচ্ছিল না বলে অনেক জায়গায় চিকিৎসা করিয়েছি। এখন নাতনি আছে, কিন্তু আমার বউমা নেই। অপারেশনের পর তার পেট ফুলে গিয়েছিল।”
কৃষ্ণার স্বামী ধর্ম নারায়ণ বলেন, “আমার স্ত্রীর বিয়ের আগে থেকেই শ্বাসকষ্ট ছিল, তবে গুরুতর কিছু না। সিজারের পর থেকেই সমস্যার কথা বলছিল, কিন্তু ক্লিনিকের কেউ গুরুত্ব দেয়নি।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, কৃষ্ণার শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়া সত্ত্বেও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ সময়মতো কোনো চিকিৎসক আনেনি এবং দ্রুত রেফারও করেনি। ফলে অবহেলার কারণেই মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন তারা।
এ বিষয়ে দেবীগঞ্জ স্কয়ার ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, “বিকেলে আমি ক্লিনিকে আসি। পুরো বিষয়টি সাক্ষাতে জানাব।”
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুমন ধর বলেন, “আমি নিজেই ওই ক্লিনিকে গিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখব।”
সিভিল সার্জন ডা. মো. মিজানুর রহমান জানান, “বিষয়টি আমি শুনিনি, তবে স্থানীয় প্রশাসনকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলব।”
এ বিষয়ে ইউএনও মাহমুদুল হাসানকে ফোন ও মেসেজে যোগাযোগ করা হলেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, এর আগেও একই ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের পর অন্তত তিন নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই শিশুর শারীরিক জটিলতা দেখা দিলে পরে রেফার্ড করা হয়।