গাজা যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতিতে নেতৃত্বমূলক ভূমিকা নিতে চায় সৌদি আরব। দেশটি হামাসকে নিরস্ত্র ও প্রভাবহীন করে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে (পিএ) পুনরায় শক্তিশালী করতে চায়—এমন পরিকল্পনা উঠে এসেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-এর হাতে আসা সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক গোপন প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সৌদি আরব গাজায় একটি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের উদ্যোগকে সমর্থন করবে। এই বাহিনীতে সৌদি আরবসহ অন্যান্য আরব ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ অংশ নিতে পারে। নথিতে বলা হয়, রাজত্বটি গাজা উপত্যকা ও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে স্থিতিশীলতা আনার জন্য একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নে আগ্রহী।
গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় হামাসের ভূমিকা প্রান্তিক করে ধীরে ধীরে প্রশাসনিক দায়িত্ব ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে পিএ-কে এমনভাবে সংস্কার করা হবে যাতে ১৯৬৭ সালের সীমানার ভিত্তিতে জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়।
সৌদি আরব মনে করে, হামাস শান্তি প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরীণ বিভাজনকে গভীর করছে। তাই তাকে নিরস্ত্র করার উদ্যোগ নেওয়া হবে ধাপে ধাপে, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক চুক্তির মাধ্যমে।
দলিলটিতে আরও বলা হয়, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের দক্ষতা বৃদ্ধি, দুর্নীতি দমন ও স্বচ্ছ প্রশাসন গঠনের মাধ্যমে নতুন কাঠামো গড়ে তোলা হবে। সৌদি আরব পিএ-কে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দেবে, তবে প্রতিবেদনে অর্থের পরিমাণ উল্লেখ নেই।
পাশাপাশি, সৌদি আরব একটি জাতীয় ফিলিস্তিনি সংলাপ আহ্বান করতে চায়, যেখানে বিভিন্ন গোষ্ঠী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ছাতার নিচে ঐক্যবদ্ধ হবে। এই সংলাপকে সফল করতে আঞ্চলিক কর্মশালা ও সম্মেলনের আয়োজনের পরিকল্পনাও রয়েছে।
তবে হামাসকে এই সংলাপে অন্তর্ভুক্ত করা হবে কি না, সে বিষয়ে দলিলে কোনো উল্লেখ নেই। পুরো প্রতিবেদনে ইসরায়েলের নামও একবারও আসেনি।
এই নথিটি ২৯ সেপ্টেম্বর তারিখে প্রস্তুত করা হয়। এর আগের দিন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
এর আগে গ্রীষ্মকালে সৌদি আরব ও ফ্রান্স যৌথভাবে গাজার জন্য একটি শান্তি পরিকল্পনা প্রস্তাব করে, যেখানে যুদ্ধবিরতি, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন ও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংলাপ পুনরায় চালুর আহ্বান জানানো হয়।
অক্টোবরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হলে বন্দি বিনিময় ও আংশিক ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার ঘটে। এতে হামাসের নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত ছিল, যদিও হামাস তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।
জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে ট্রাম্প বিভিন্ন আরব ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে গাজায় শান্তিরক্ষী বাহিনী গঠনে সেনা পাঠানোর আহ্বান জানান। পরবর্তীতে শারম আল শেখে গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে বৈঠক হয়, যেখানে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ অনুপস্থিত ছিলেন।
মিসর, সৌদি ও আমিরাতি সূত্রগুলো মিডল ইস্ট আই-কে জানায়, বৈঠকে তাদের প্রত্যাশিত প্রভাব না পাওয়া এবং অর্থনৈতিক বোঝা ভাগাভাগি নিয়ে অসন্তুষ্টির কারণেই তারা অংশ নেয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, গাজার পুনর্গঠন ও মানবিক সহায়তার মূল ব্যয় বহন করবে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
এদিকে ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ বলেন, যদি সৌদি আরব সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের বিনিময়ে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের দাবি তোলে, তাহলে ইসরায়েল তা প্রত্যাখ্যান করবে।
তিনি মন্তব্য করেন, “যদি সৌদি আরব বলে, সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের বিনিময়ে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র চাই, তাহলে না ধন্যবাদ, বন্ধুরা। তোমরা মরুভূমিতে উট নিয়ে ঘুরো, আমরা আমাদের রাষ্ট্র ও অর্থনীতি আরও উন্নত করব।”