সিজার বা সিজারিয়ান ডেলিভারি (Caesarean section) হলো অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের একটি পদ্ধতি। এটি অনেক সময় মা ও শিশুর জীবন বাঁচাতে প্রয়োজনীয় হলেও, স্বাভাবিক ডেলিভারির তুলনায় কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা তৈরি করতে পারে। চলুন জেনে নিই, সিজার ডেলিভারির কারণে মেয়েদের শরীরে কী কী ক্ষতি হতে পারে এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে কী ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে।
✅ ইনফেকশন: সিজারের পর ইউটারাস, ব্লাডস্ট্রিম অথবা অপারেশন স্থানে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটি মা ও শিশুর জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
✅ অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ: অস্ত্রোপচারের সময় বা পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে, যা কখনো কখনো প্রাণঘাতী হতে পারে।
✅ অঙ্গের আঘাত: ইউটারাস, মূত্রথলি বা আশেপাশের রক্তনালীতে চোট লাগার আশঙ্কা থাকে।
✅ রক্ত জমাট বাঁধা (Blood Clots): পা অথবা ফুসফুসে জমাট বাঁধা রক্ত (Deep Vein Thrombosis বা Pulmonary Embolism) মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে।
✅ দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা: সিজারের কাটার জায়গায় কিংবা পেটের গভীরে অনেক সময় দীর্ঘদিন ধরে ব্যথা অনুভূত হয়।
👉 Oxytocin ইনজেকশন: জরায়ু ছোট করতে এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ কমাতে।
👉 Antibiotic ইনজেকশন: ইনফেকশন প্রতিরোধে।
👉 Painkiller ইনজেকশন: সিজারের পর ব্যথা কমানোর জন্য, যেমন ট্রামাডল বা ডাইক্লোফেনাক।
🔴 পেটের ভেতরে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের চামড়া জোড়া লাগা (Abdominal Adhesions):
সিজারের কাটার ফলে পেটের ভেতরের অঙ্গগুলোর মধ্যে চামড়া আটকে যেতে পারে। এর ফলে বদহজম, পেট ব্যথা, কিংবা অন্ত্রের বাধা (intestinal obstruction) হতে পারে।
🔴 চিরস্থায়ী ব্যথা (Chronic Pain):
সিজারের ৫-১০ বছর পর অনেক মহিলার তলপেটে বা নাভির নিচে ব্যথা অনুভূত হয়, যা স্থায়ীও হতে পারে।
🔴 গর্ভাশয়ের দুর্বলতা:
সিজারের পরে গর্ভাশয় কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। পরবর্তী জীবনে ইউটারাস ঝুলে যাওয়ার (uterine prolapse) ঝুঁকি বাড়ে।
🔴 ভবিষ্যত গর্ভধারণের সমস্যা:
পরবর্তী গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা সংক্রান্ত সমস্যা (Placenta previa, Placenta accreta) হতে পারে। আগের সিজারের দাগে ইউটারাস ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
🔴 পেটের চামড়ার ঢিলাভাব ও মোটা হয়ে যাওয়া:
সিজারের কারণে পেটের চামড়া টানটান না থেকে ঢিলে হয়ে যায় এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে পেটের চারপাশে চর্বি জমা বাড়তে থাকে।
সিজার একটি জীবনরক্ষাকারী অস্ত্রোপচার হলেও অপ্রয়োজনে করলে তা শরীরে নানান ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে বয়স বাড়ার সাথে সাথে সিজারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আরও প্রকট হয়ে ওঠে। তাই প্রয়োজন ছাড়া সিজার করানো উচিত নয় এবং সিজারের পর নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অপরিহার্য।