দীর্ঘদিন ধরে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে জর্জরিত সুদানের সেনাবাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-কে ‘নির্মূলের পরিকল্পনা’ নিয়ে মাঠে নামবে।
দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এর সভাপতিত্বে সামরিক প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের এক জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বুধবার (৫ নভেম্বর) ফরাসি সংবাদমাধ্যম ফ্রান্স টোয়েন্টিফোর জানায়, বৈঠক শেষে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে সুদানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হাসান কাবরুন বলেন, “শান্তি অর্জনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা এবং প্রস্তাবের জন্য আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। তবে সুদানের জনগণের লড়াইয়ের প্রস্তুতি চলছে, এবং যুদ্ধের জন্য আমাদের প্রস্তুতি একটি বৈধ জাতীয় অধিকার।”
তবে মার্কিন প্রস্তাবের বিস্তারিত কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। একদিন আগেই হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট বলেন, “ওয়াশিংটন এই সংঘাতের শান্তিপূর্ণ অবসান চায়। তবে বর্তমানে সুদানের পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল।”
তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র মিশর, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে যৌথভাবে একটি সম্ভাব্য শান্তি চুক্তি অর্জনে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
আফ্রিকার হর্ন অঞ্চলে অবস্থিত ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ দেশ সুদান ২০১৯ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের পতনের পর থেকে একের পর এক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিদেশি হস্তক্ষেপে জর্জরিত।
স্থানীয় বিশ্লেষকদের মতে, সুদানের সংঘাতে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইসরায়েল সরাসরি জড়িত। তাদের মূল লক্ষ্য দেশটির সোনার খনি নিয়ন্ত্রণ এবং “আরবীকরণ” এজেন্ডা বাস্তবায়ন।
বছরের পর বছর ধরে চলা জনঅস্থিরতা ও রাজনৈতিক চাপের মধ্যে আল-বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। এর পর থেকেই অস্থিরতার নতুন অধ্যায় শুরু হয়।
সুদানি সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফ একসময় আল-বশির সরকারের পতনে একসঙ্গে কাজ করেছিল। কিন্তু ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে তাদের মধ্যে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ শুরু হয়। এই সংঘাত দেশটিকে পতনের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে।
চলমান এই সংঘাতে হাজারো মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ইতোমধ্যেই ভয়াবহ মানবিক সংকট আরও গভীর আকার ধারণ করেছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহে আল-ফাশার শহরে আরএসএফ বাহিনীর হামলায় শত শত বেসামরিক মানুষের মৃত্যু আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধবিরতির সুযোগ না নিয়ে সেনাবাহিনীর এই সামরিক অভিযান ঘোষণার ফলে সুদানের পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে।