ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সতর্ক করে বলেছেন, “আগামীর যুদ্ধক্ষেত্র হবে মহাকাশ।” বুধবার (১২ নভেম্বর) ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর তুলুসে অবস্থিত দেশের প্রধান মহাকাশ ও বিমান চলাচল কেন্দ্রে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন। খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
ম্যাক্রোঁ জানান, ২০২২ সালে ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করার পর থেকেই রাশিয়া মহাকাশ থেকে গুপ্তচর কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তার দাবি, রুশ মহাকাশ যানগুলো ফরাসি উপগ্রহগুলোকে নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট অভিযোগ করেন, সম্প্রতি ফ্রান্সের মহাকাশ স্থাপনাগুলো ব্যাপকভাবে জিপিএস সিগন্যাল জ্যাম ও সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডকে “স্পষ্ট নিরাপত্তা হুমকি” হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, “ফ্রান্স তার সামরিক কার্যক্রমকে এখন মহাকাশে প্রসারিত করবে। মহাকাশ আর কেবল বিজ্ঞান বা বাণিজ্যের ক্ষেত্র নয়, এটি নিরাপত্তার ক্ষেত্রও হয়ে উঠেছে।”
ম্যাক্রোঁ তার বক্তব্যে ইঙ্গিত দেন যে, রাশিয়া মহাকাশে পারমাণবিক অস্ত্র মজুত করছে, যা তিনি “সমগ্র বিশ্বের জন্য এক ভয়াবহ বিপর্যয়” বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “যদি মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়, তাহলে তা মানব সভ্যতার নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি হবে।”
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেন, ২০৩০ সাল পর্যন্ত মহাকাশ প্রতিরক্ষা খাতে অতিরিক্ত ৪.২ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করবে ফ্রান্স। তবে তিনি এখনো বিস্তারিতভাবে জানাননি এই বিপুল অর্থ কোন কোন খাতে ব্যয় হবে।
ধারণা করা হচ্ছে, এই বাজেটের বড় অংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য লঞ্চার নির্মাণ, উচ্চ থ্রাস্ট ইঞ্জিন উন্নয়ন এবং মহাকাশ নজরদারি প্রযুক্তি শক্তিশালী করার পেছনে ব্যয় করা হতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ফ্রান্সের এই ঘোষণা ইউরোপীয় মহাদেশে “মহাকাশ প্রতিরক্ষা প্রতিযোগিতা” শুরু করতে পারে। ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন মহাকাশ সামরিকীকরণে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। এবার ফ্রান্সও সেই তালিকায় আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিচ্ছে।
ম্যাক্রোঁর বক্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে, ভবিষ্যতের যুদ্ধ আর কেবল স্থল, জল বা আকাশে সীমাবদ্ধ থাকবে না। প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মহাকাশ এখন হয়ে উঠছে পরবর্তী বৈশ্বিক সংঘাতের মঞ্চ, যেখানে তথ্য, উপগ্রহ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই নির্ধারণ করবে আধিপত্যের দিকনির্দেশনা।