ইউক্রেন-রাশিয়া দীর্ঘদিনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে যখন হাজারো প্রাণহানি ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে, ঠিক তখনই যুদ্ধ বন্ধে আলোচনার নতুন আশা দেখাচ্ছে কিয়েভ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সম্প্রতি জানিয়েছেন, তাঁর সরকার যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে আবারও শান্তি আলোচনায় বসতে চায় এবং এ নিয়ে রাশিয়াকে প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে। এই প্রস্তাব পাঠিয়েছেন ইউক্রেনের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তম উমেরভ, যিনি বর্তমানে জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
শনিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, “শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সবকিছু করতে হবে। আর রাশিয়াকে সিদ্ধান্তহীনতা পরিহার করতে হবে।” তাঁর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়, কিয়েভ এক ধাপ এগিয়ে এসেছে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য। যদিও আলোচনার নির্দিষ্ট রূপরেখা বা সময়সূচি নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।
অন্যদিকে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কার্যালয় ক্রেমলিন জানিয়েছে, রাশিয়াও শান্তি আলোচনার জন্য প্রস্তুত। তবে পুতিনের অগ্রাধিকার হলো ইউক্রেনে রাশিয়ার কৌশলগত লক্ষ্য পূরণ করা। অর্থাৎ, মস্কো এখনো তাদের নিজস্ব শর্তে আলোচনা করতে চায়।
এই শান্তি প্রস্তাব এমন সময়ে এসেছে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়িয়ে ৫০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, পুতিন এই সময়ের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ না করলে মস্কোর ওপর আরও কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। বর্তমানে রাশিয়া পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে অর্থনৈতিক চাপের মুখে রয়েছে।
রুস্তম উমেরভ এর আগে ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত দুই দফা শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তাঁকে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রধান করার ফলে ধারণা করা হচ্ছে, শান্তি আলোচনায় এখন আরও গতি আসতে পারে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যদি দুই পক্ষ আলোচনায় বসে এবং বাস্তবমুখী সমাধানে পৌঁছাতে চায়, তবে যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে বিশ্ব কিছুটা হলেও মুক্তি পেতে পারে।
এই প্রস্তাব যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে ইউরোপের ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশে বড় পরিবর্তন আসতে পারে এবং একটি দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের অবসান ঘটার সুযোগ তৈরি হবে। এখন দেখার বিষয়, মস্কো কতটা ইতিবাচকভাবে সাড়া দেয় এবং পশ্চিমা দেশগুলোর ভূমিকা কী হয় এই প্রক্রিয়ায়।