জামালপুর শহরের শাহাপুর মুন্সি পাড়া এলাকায় একযুগ ধরে লাইসেন্সবিহীনভাবে পরিচালিত হচ্ছে জনতা জেনারেল হাসপাতাল। প্রশাসনের চোখের সামনে বছরের পর বছর অবৈধভাবে হাসপাতালটি চালালেও এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, এই প্রতিষ্ঠানে কোনো অনুমোদন ছাড়াই বড় বড় অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে, যা যেকোনো সময় মানুষের প্রাণহানির কারণ হতে পারে।
স্থানীয়রা জানান, হাসপাতালটির ব্যবস্থাপক মুকুল নামের এক ব্যক্তি নিজেকে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি দাবি করেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তাঁর পরিচিত বড় কর্মকর্তারা আছেন, যাদের কারণে প্রশাসন তাঁর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে সাহস করে না। এলাকাবাসীর আশঙ্কা— এমন একটি ভুয়া হাসপাতালে রোগীদের জীবন সব সময় ঝুঁকির মধ্যে থাকে।
সাংবাদিকরা বিষয়টি অনুসন্ধানে গেলে দেখা যায়, জনতা জেনারেল হাসপাতালের কোনো বৈধ কাগজপত্রই নেই। বৃহস্পতিবার তারা জামালপুরের সিভিল সার্জন কার্যালয়ে গিয়ে বিষয়টি যাচাই করার চেষ্টা করলে সেখানকার কর্মকর্তারা জানান, হাসপাতালটির নামে কোনো ধরনের লাইসেন্স বা অনলাইন আবেদন পাওয়া যায়নি।
একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে বলেন, “আমাদের রেকর্ডে জনতা জেনারেল হাসপাতালের কোনো কাগজপত্র নেই। একবার মুকুল নামে একজন এসে কাগজ জমা দেওয়ার কথা বলেছিলেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো আবেদন অনলাইনে বা হাতে জমা পড়েনি।”
সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ওই কর্মকর্তা মুকুলকে ফোন করে জানান, “আপনি এইভাবে হাসপাতাল পরিচালনা করতে পারেন না। আপনার কোনো লাইসেন্স নেই, অনলাইনেও আবেদন করেননি।”
শুক্রবার বিকেলে ঘটনাস্থল শাহাপুর মুন্সি পাড়ায় গেলে স্থানীয়রা সাংবাদিকদের বলেন, “এই হাসপাতালে কোনো ডাক্তার নেই। ফার্মাসিস্টকে ডাক্তার বানিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আমরা ভয়ে কিছু বলি না, কারণ মুকুলের অনেক প্রভাব আছে বলে শুনি।”
স্থানীয়রা আরো বলেন, “এখন সাংবাদিক ভাইরা এসেছেন দেখে আমরা বিষয়টা বলার সাহস পেলাম। এতদিন আমরা জানতামই না যে এভাবে অবৈধ হাসপাতাল চালানো অপরাধ।”
জামালপুরের সিভিল সার্জন মো. আজিজুল হক বিষয়টি সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানান, “যদি সত্যিই কোনো হাসপাতাল অনুমোদন ছাড়া পরিচালিত হয়, আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব। আগামী রবিবারের মধ্যেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
এদিকে, জামালপুরের সচেতন নাগরিক সমাজ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। তাদের মতে, একটি হাসপাতাল যখন লাইসেন্সবিহীনভাবে এত বছর ধরে চলছে, তখন এটি প্রশাসনিক ব্যর্থতারও প্রতিফলন। এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নিলে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।