যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণায় আগামী ১ আগস্ট থেকে আমদানিকৃত পণ্যে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা থাকলেও এ নিয়ে অযথা উদ্বেগ না ছড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
রোববার (২০ জুলাই) ঢাকার বনানীর হোটেল শেরাটনে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) আয়োজিত ‘টেকসই বিনিয়োগ বিষয়ক নীতি সংলাপে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, “আমাদের মনে রাখতে হবে, সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বারবার এই ধরনের শুল্কের আলোচনা করে অযথা উদ্বেগ তৈরির প্রয়োজন নেই।”
সংলাপে জ্বালানি, পোশাক ও তামাক খাত নিয়ে তিনটি উপস্থাপনা দেওয়া হয়। পোশাক খাতে টেকসই বিনিয়োগ নিয়ে উপস্থাপন করেন রিকভারি গ্রুপের প্রধান রূপান্তর কর্মকর্তা ফাহমি মুহসিন। তামাক খাত নিয়ে ফিলিপ মরিস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক রেজওয়ানুর রহমান মাহমুদ এবং জ্বালানি খাতে শেভরন বাংলাদেশের পরিচালক ইমরুল কবির প্রাসঙ্গিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন।
উপস্থাপনাগুলো শেষে মূল আলোচনা পর্ব ও প্রশ্নোত্তর সেশনে অংশ নিয়ে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পরও অনেকেই ভেবেছিল আমাদের গার্মেন্টস খাত ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু সরকার ও উদ্যোক্তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সে খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ঠিক একইভাবে আমরা একসঙ্গে কাজ করলে যেকোনো প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে পারব।”
টেকসই বিনিয়োগের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই ধারণা শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং বিশ্বের সব দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে হতাশাজনকভাবে দেখা যাচ্ছে, যারা পরিবেশ দূষণের জন্য বেশি দায়ী, তারা এসব বিনিয়োগে পিছিয়ে। শুধু টেকসই প্রযুক্তি নয়, জীবনধারণের ধরনেও পরিবর্তন আনতে হবে—জল সংরক্ষণ, ভোগ কমানো এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।”
তিনি আরও জানান, সরকারের পক্ষ থেকে শিল্প খাতে ভূগর্ভস্থ পানি বিনামূল্যে ব্যবহারের বিষয়টি কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং এ বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। সরকারি ভবনগুলোর ছাদে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকারের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে উৎপাদন খাতে ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করা।
ট্যানারি শিল্প নিয়ে প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, “এখানে সরকার এবং ব্যবসায়ীদের যৌথ ব্যর্থতা রয়েছে। এককভাবে কাউকে দোষারোপ করা উচিত নয়। তবে আমরা এখন ট্যানারি শিল্প নিয়ে নতুন করে পর্যালোচনা করছি।”
সংলাপের সভাপতিত্ব করেন অ্যামচেম সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক নিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের সুযোগ রয়েছে। আমরা তুলা আমদানির মতো বিষয়েও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় আছি। কাস্টমস সংস্কারও আলোচনায় রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “দূষণ শুধু পরিবেশগত ইস্যু নয়, অর্থনীতির ওপরও ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর জিডিপির প্রায় ৩.৪ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে দূষণের কারণে। তবে এও সত্য যে, বর্তমানে বাংলাদেশে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব কারখানা রয়েছে, যা আমাদের গর্ব।”
এ অনুষ্ঠানে অ্যামচেমের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, উদ্যোক্তা ও নীতিনির্ধারকেরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, পরিবেশ রক্ষা ও বিনিয়োগবান্ধব নীতির দিকনির্দেশনা উঠে আসে।