টানা ভারি বর্ষণ এবং নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পশ্চিম-উত্তর আমেরিকায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার দশ হাজারেরও বেশি মানুষকে দ্রুত ঘরবাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে বার্তাসংস্থা এএফপি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্য ও কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া কয়েক দিন ধরে শক্তিশালী ঝড়-বৃষ্টির কবলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
ওয়াশিংটনের সিয়াটল ও টাকোমার দক্ষিণাঞ্চলে নদীর পানি দ্রুত বাড়তে থাকায় স্থানীয়দের জরুরি ভিত্তিতে সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে। বিমান থেকে তোলা ছবিতে দেখা গেছে—বিস্তীর্ণ কৃষিজমি পানির নিচে, নদীর পানি বাড়িঘরের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। বিশেষ করে ওর্টিং নগরীতে লেভেল–৩ সতর্কতা জারি করে তাৎক্ষণিকভাবে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানায়, এই বন্যা জীবন ও সম্পদের ওপর বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করেছে এবং এলাকাটিতে প্রবেশও আইনগতভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ওয়াশিংটনের উত্তরের সিয়াটল ও স্নোহোমিশের বহু ঘরবাড়ি ইতোমধ্যে ডুবে গেছে। সীমান্তবর্তী সুমাস এলাকার নিম্নাঞ্চলও পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অপরদিকে, সীমান্তের ওপারে কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার অ্যাবট্সফোর্ড শহরের বিশাল অংশ ডুবে গেছে—ঝুঁকির মুখে পড়েছে কয়েকশ’ বাড়ি।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার পরিবহন প্ল্যাটফর্ম ড্রাইভ বিসির তথ্যমতে, ভ্যাঙ্কুভারের সঙ্গে সংযোগকারী কয়েকটি প্রধান মহাসড়ক বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে অনেক এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
আবহাওয়াবিদরা জানান, প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ধেয়ে আসা একটি শক্তিশালী ‘অ্যাটমোসফেরিক রিভার’-এর প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার পশ্চিম উপকূলজুড়ে ২৫ সেন্টিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। যদিও বৃহস্পতিবার বৃষ্টিপাত কিছুটা কমেছে, তবে নদীর পানি নামতে সময় লাগবে বলে বন্যা পরিস্থিতি আরও কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর জানায়, সপ্তাহান্তে তুলনামূলক শুষ্ক আবহাওয়া থাকতে পারে। তবে পশ্চিম ওয়াশিংটন ও উত্তর-পশ্চিম ওরেগনের কিছু এলাকায় ভয়াবহ বন্যার প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ওয়াশিংটন ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যদের কাজে লাগানো হয়েছে। তারা বালুর বস্তার বাধ নির্মাণসহ জরুরি উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। আরও দুই শতাধিক সেনা পথে রয়েছে বলে জানিয়েছে সামরিক বাহিনী।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবই এই অস্বাভাবিক আবহাওয়ার অন্যতম কারণ। উষ্ণতর বায়ুমণ্ডল মৌসুমি আবহাওয়ায় বড় ধরনের ওঠানামা তৈরি করছে—কোথাও ভয়াবহ বন্যা, কোথাও দীর্ঘ খরা। শিল্পায়নের যুগ থেকে অবাধে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলেই পরিস্থিতি আরও প্রকট হচ্ছে।