1. [email protected] : Hossain Monir : Hossain Monir
  2. [email protected] : RT BD NEWS : RT BD NEWS
  3. [email protected] : RT BD NEWS :
এপ্রিলফুল: ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মুসলমানদের প্রতি তার প্রভাব - RT BD NEWS
রবিবার, ০৪ মে ২০২৫, ০৪:৩৩ অপরাহ্ন

এপ্রিলফুল: ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মুসলমানদের প্রতি তার প্রভাব

নুরনাহার আক্তার
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫
২০০১ সালে ডেনামার্কের কোপেনহেগেনে এপ্রিল ফুল দিবস উপলক্ষে রাস্তায় সৃষ্টি করা একটি স্থাপত্য।
২০০১ সালে ডেনামার্কের কোপেনহেগেনে এপ্রিল ফুল দিবস উপলক্ষে রাস্তায় সৃষ্টি করা একটি স্থাপত্য।

এপ্রিলফুল দিবস প্রতি বছর ১ এপ্রিল পালন করা হয় এবং এটি একটি আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে বেশ পরিচিত। সারা বিশ্বের মানুষ এদিনে একে অপরকে বোকা বানানোর মাধ্যমে মজা করে, যা একে “বোকা বানানোর দিন” হিসেবে পরিচিত করেছে। কিন্তু এই দিবসের পিছনে যে ইতিহাস ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উৎসব জড়িত, তা অনেকেই জানেন না।

এপ্রিলফুলের উৎপত্তি মূলত রোমান হিলারিয়া উৎসব, ভারতের হোলি উৎসব এবং মধ্যযুগীয় ফুল ফিস্টের সাথে জড়িত। বিশেষ করে, চসারের ক্যান্টারবারি টেলস (১৩৯২) তে এপ্রিলফুলের উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে আধুনিক পণ্ডিতরা বিশ্বাস করেন যে চসারের কাজটি এক ধরনের পথভ্রষ্টতা ছিল।

এটি শুধুমাত্র পশ্চিমা সংস্কৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং ইরানে পার্সি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষের ১৩তম দিনেও মজা করা হয়, যা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের ১ এপ্রিল ও ২ এপ্রিলের সাথে সদৃশ।

১৫৬৪ সালে ফ্রান্সে নতুন ক্যালেন্ডার চালু করার পর ১ জানুয়ারিকে নতুন বছরের প্রথম দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে যারা পুরনো ক্যালেন্ডার অনুসরণ করতেন তারা ১ এপ্রিলকেই নববর্ষ হিসেবে পালন করতেন। তাদেরকে ১ এপ্রিল বোকা বানানো হতো, আর এই কারণে ফ্রান্সে প্রতি বছর পয়সন দ্য আভ্রিল (Poisson d’Avril) পালিত হয়। এতে শিশুরা একে অপরের পিঠে কাগজের মাছ ঝুলিয়ে দিয়ে “পয়সন দ্য আভ্রিল” চিৎকার করত। এটি মূলত মাছ ধরার সময় বাচ্চা মাছের সহজ শিকার হওয়ার ঐতিহ্য থেকে এসেছে।

বাংলাদেশে একটি প্রচলিত ধারণা রয়েছে যে এপ্রিলফুল দিবসের সাথে মুসলমানদের একটি ট্র্যাজেডি জড়িত। বলা হয়ে থাকে যে ১৫ শতকের শেষ দিকে স্পেনে মুসলিম শাসন শেষ হয় এবং রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলা মুসলিমদের গ্রানাডাতে পরাজিত করে, যেখানে অসংখ্য মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে মসজিদে আটকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়। আর সেই দিনটি ছিল ১ এপ্রিল।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান জানিয়েছেন যে, এই তথ্যের কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। তিনি বলেন, “গ্রানাডার শাসক ছিলেন দ্বাদশ মোহাম্মদ, এবং ফার্দিনান্দ ও ইসাবেলা সেখানে গ্রানাডা দখল করেন জানুয়ারি মাসে, ১ বা ২ জানুয়ারি তারিখে।” তাই এপ্রিলফুলের যে ট্র্যাজেডির কথা বলা হয়, তার সাথে ঐতিহাসিক কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায় না।

এপ্রিলফুল বা মিথ্যা বলা, প্রতারণা করা ইসলামে নিষিদ্ধ। মুসলমানদের জন্য এটি একটি বিব্রতকর ঘটনা হতে পারে, কারণ ইসলামে কাউকে বোকা বানানো বা মিথ্যা বলা, যা অন্যের ক্ষতি বা হাস্যরসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তা সমর্থনযোগ্য নয়। এ কারণে অনেক মুসলিম দেশ বা মুসলিম ব্যক্তিরা এই দিবসটি উদযাপন না করাই শ্রেয় মনে করেন।

এপ্রিলফুল দিবস শুধুমাত্র একটি মজার দিন হিসেবে পরিচিত হলেও এর ইতিহাস এবং ঐতিহ্যটি অনেক গভীর এবং জটিল। এতে সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগুলোও জড়িত। মুসলমানদের জন্য বিশেষভাবে এই দিনটি উদযাপন করা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, কারণ ইসলাম ধর্ম মিথ্যা বলা বা কাউকে ক্ষতি করার বিরুদ্ধে। সুতরাং, এপ্রিলফুল দিবস উদযাপন করার সময় আমাদের সতর্ক থাকা উচিত এবং অন্যের ধর্মীয় বা সামাজিক অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা উচিত।

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 𝑹𝑻 𝑩𝑫 𝑵𝑬𝑾𝑺 আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট