রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার সীমান্ত স্কয়ার বিপণিবিতানের ক্রাউন ডায়মন্ড অ্যান্ড জুয়েলার্স থেকে চুরি হয়েছে ১৫৯ ভরি সোনা। দোকানের বিক্রয়কর্মীরা জুমার নামাজ পড়তে গেলে চোরচক্র মাত্র সাত মিনিট ২৫ সেকেন্ডের মধ্যে চুরি করে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) বেলা ১টার দিকে এ চুরির ঘটনা ঘটে। বিপণিবিতানের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চোরচক্র অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এই চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বেলা ১টা ১ মিনিটের দিকে নয়জনের একটি দল দোকানের সামনে এসে দাঁড়ায়। তাঁদের মধ্যে সাতজনের মুখে মাস্ক ছিল। একজন চাদর মেলে ধরে দোকানের শাটার ঢেকে দেন। এরপর চাদরের আড়ালে থাকা দুজন শাটারের তালা কেটে ফেলেন।
শাটার খুলে দোকানের ভেতরে ঢুকে যায় চক্রের একজন সদস্য। বাকি সদস্যরা আশপাশের দোকানে গিয়ে জিনিসপত্র কেনার ভান করে বিক্রয়কর্মীদের ব্যস্ত রাখে।
সাত মিনিট ২৫ সেকেন্ড পরে দোকানের ভেতর থেকে সেই সদস্যটি ব্যাগভর্তি সোনা নিয়ে বেরিয়ে আসে। এরপর একে একে চক্রের বাকি সদস্যরাও দোকান থেকে বেরিয়ে যায়।
চুরির পর দোকানের মালিক কাজী আকাশ ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। তিনি জানান, দোকানের বিক্রয়কর্মীরা জুমার নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় দোকানের শাটারে তালা দিয়ে গিয়েছিলেন। এই সুযোগেই চোরচক্র তালা কেটে ভেতরে ঢুকে দোকানে সাজানো সব সোনা নিয়ে গেছে।
কাজী আকাশ বলেন, ‘আমরা অনেক সতর্ক ছিলাম। কিন্তু এত দ্রুত, এত পরিকল্পিতভাবে চুরি হবে, তা কল্পনাও করতে পারিনি। সিসিটিভি ফুটেজে পুরো ঘটনা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।’
ধানমন্ডি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল আলীম বলেন, ‘সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অপরাধীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। চুরির ঘটনায় বিপণিবিতানের কোনো কর্মচারী জড়িত কি না, তা নিয়েও তদন্ত চলছে।’
সীমান্ত স্কয়ারের নিচতলায় থাকা ক্রাউন ডায়মন্ড অ্যান্ড জুয়েলার্স দোকানের আশপাশে আরও দুটি সোনা ও ডায়মন্ডের দোকান রয়েছে। তবে আশপাশের দোকানগুলোতে চুরি না হলেও এ ঘটনায় বিপণিবিতানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিপণিবিতান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চুরির সময় ক্রেতার উপস্থিতি কম ছিল। চোরচক্র সদস্যরা সাধারণ ক্রেতার মতো করেই ভেতরে ঢুকে এ চুরি করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানমালিক বলেন, ‘নিরাপত্তার জন্য ক্যামেরা থাকলেও বিপণিবিতানে সশস্ত্র নিরাপত্তাকর্মী নেই। জুমার নামাজের সময় অনেক দোকানের কর্মচারীরা বাইরে চলে যায়। এই সুযোগেই এমন বড় ধরনের চুরির ঘটনা ঘটল।’
পুলিশ জানিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজে চোরচক্রের সদস্যদের গতিবিধি স্পষ্ট দেখা গেলেও তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করতে কাজ করতে হচ্ছে বেশ কঠিনভাবে। কারণ, বেশিরভাগ সদস্য মুখে মাস্ক পরে ছিল।
চুরির এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ যৌথভাবে তদন্ত চালাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত চোরচক্রের কোনো সদস্যকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।