রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে গণহত্যার ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, গণজাগরণ মঞ্চের ইমরান এইচ সরকার, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর, সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার ও বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বুধবার (১২ মার্চ) ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন।
এছাড়া এই মামলায় চারজন অভিযুক্ত, যারা ইতোমধ্যে কারাগারে রয়েছেন, তাদেরকে প্রোডাকশন ওয়ারেন্টের মাধ্যমে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তারা হলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, সাবেক আইজিপি শহিদুল হক, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোল্লা নজরুল ইসলাম।
২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে গণহত্যার অভিযোগে হেফাজতে ইসলাম ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে মামলা দায়ের করে। গত ২৭ নভেম্বর এই মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৫০ জনকে আসামি করে অভিযোগ দাখিল করা হয়। এর আগে, ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) মো. জাকী-আল-ফারাবীর আদালতে বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী একই অভিযোগ এনে মামলা করেন।
এই মামলায় আরও অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম রয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
বাদীর অভিযোগ অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলাম তাদের ১৩ দফা দাবিতে শাপলা চত্বরে সমাবেশ করে। অভিযুক্তরা পরস্পরের যোগসাজশে রাত ১১টার দিকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অভিযান চালাতে সহায়তা করেন। অভিযোগ রয়েছে, এই অভিযানে মাদরাসা ছাত্র ও পথচারীদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালানো হয় এবং পরে লাশ গুম করা হয়। নিহতদের পরিবার থানায় মামলা করতে চাইলে তা গ্রহণ করা হয়নি।
শাপলা চত্বরের ঘটনায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার খবরে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সরকারপক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, তবে বিরোধী দলগুলো এই ঘটনাকে ন্যায়বিচারের পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে।
এই মামলার পরবর্তী শুনানি কবে হবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। তবে ট্রাইব্যুনালের আদেশ অনুসারে, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।