তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় নিজের অভিজ্ঞতা ও আয়নাঘরের ভয়াবহতার কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, গুম এবং নিপীড়নের সেই মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা এখনও ভুক্তভোগীরা প্রকাশ করতে চান না, কারণ তা তাদের কাছে চরম ভীতিকর।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “আয়নাঘর, যেখানে মানুষকে গুম করা হতো, সেখানকার ২৪ ঘণ্টার অভিজ্ঞতা আমারও আছে। আমি থেকেছি সেই রুমটায় এবং দেখেছি দেয়ালে তাদের লেখা, যারা দীর্ঘদিন ধরে সেখানে বন্দি ছিলেন।” তিনি আরও বলেন, গত ১৫-১৬ বছরের নিপীড়নের ভয়াবহ গল্পগুলো এতটাই তীব্র যে ভুক্তভোগীরা সেগুলো প্রকাশ করতে ভয় পান।
তিনি জানান, গুমের শিকার হওয়া মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। গুম কমিশনে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৬শয়ের মতো আবেদন জমা পড়েছে, যা বেড়ে পাঁচ হাজারে পৌঁছাতে পারে। নাহিদ ইসলাম বলেন, “এই অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের রাষ্ট্র একেবারেই এড়িয়ে গেছে। আমরা এই কথাগুলো প্রকাশ করতে পারিনি।”
আলোচনায় নাহিদ ইসলাম বলেন, জনগণের নিপীড়নের গল্প এখন আর্টওয়ার এবং গ্রাফিতির মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। তিনি বলেন, “বিগত রেজিমের নিপীড়নের অভিজ্ঞতা শিল্পীরা তাদের কাজের মাধ্যমে তুলে আনছেন। মেইনস্ট্রিম পত্রিকাগুলোতেও তখন কার্টুন আঁকা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দেয়াল লিখন এবং আর্টওয়ার আমাদের আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।”
তিনি জানান, এই শিল্পকর্মগুলো সংরক্ষণের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে, যাতে মানুষ কী বলতে চেয়েছিল এবং কী বলতে চায় তার যথাযথ উপাদান পাওয়া যায়।
“বিদ্রূপ ও উপহাসের রাজনীতি: জুলাই বিদ্রোহের সময় কার্টুন ও গ্রাফিতি” শীর্ষক এই আলোচনাসভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম আমানুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাভিন মুরশিদ।
বক্তারা বিদ্রূপ ও গ্রাফিতির রাজনৈতিক গুরুত্ব এবং নিপীড়নের গল্প তুলে ধরার প্রয়াসকে প্রশংসা করেন। তাদের মতে, শিল্পকর্ম নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করে এবং ইতিহাস সংরক্ষণে ভূমিকা রাখে।
আলোচনাসভায় বক্তারা অতীতের নিপীড়ন ও গুমের ঘটনাগুলো নথিভুক্ত ও সংরক্ষণের উপর গুরুত্বারোপ করেন। জনগণের অধিকার এবং অভিব্যক্তির স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আর্টওয়ার ও দেয়াল লিখনের মতো বিকল্প মাধ্যমকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান।