বাংলাদেশের জনগণ যেন কোনো ধরনের বাধা বা হুমকি ছাড়াই অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে, সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস একটি নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া তৈরির ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দেশের জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে—তারা কি ছোট পরিসরের সংস্কার চায়, নাকি দীর্ঘ মেয়াদী সংস্কার। সে অনুযায়ীই নির্বাচন আয়োজন করা হবে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শোয়াবের সঙ্গে বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সুইজারল্যান্ডের দাভোসে এক বৈঠকে ড. ইউনূস এই বক্তব্য দেন। ডব্লিউইএফ-এর বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে আয়োজিত এই বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, গত বছরের জুলাই মাসে শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে বৈষম্য দূর করার দাবিতে রাজপথে নেমে এসেছিল। ঢাকার দেয়ালজুড়ে আঁকা গ্রাফিতি এবং শিল্পকর্ম তাদের স্বপ্ন এবং আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে ওঠে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত ১৬ বছরে নতুন ভোটাররা ভোট দেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কার্যক্রম তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকার দেশের জনগণের ইচ্ছার ভিত্তিতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রক্রিয়া তৈরি করতে চায়। তিনি জনগণকে আহ্বান জানান, তারা যেন সিদ্ধান্ত নেন—তারা কি দ্রুত নির্বাচন চান, নাকি দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার।
বর্তমান প্রজন্মকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম হিসেবে আখ্যায়িত করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, প্রযুক্তি এই প্রজন্মকে বদলে দিয়েছে। তারা শুধু বাংলাদেশি নয়, বরং বৈশ্বিক তরুণ প্রজন্মের অংশ। এই প্রজন্মের অমিত সম্ভাবনা রয়েছে, যারা পুরনো বাংলাদেশে ফিরতে চায় না।
তিনি বলেন, “আমরা একটি ঐকমত্য কমিশন গঠন করছি, যেখানে রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের সংগঠনগুলোর মতামতের ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ তৈরি করা হবে। এই সনদ নতুন বাংলাদেশ গড়ার ভিত্তি স্থাপন করবে।”
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তার সরকার দেশের অর্থনীতিকে ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও ব্যাংকিং খাতে ইতোমধ্যেই গতি ফিরে এসেছে।
অধ্যাপক ইউনূসের বক্তব্যে মুগ্ধ হয়ে ডব্লিউইএফ-এর প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শোয়াব বলেছেন, এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। আধাঘণ্টার এই আলাপচারিতায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে এবং নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি তৈরি করতে সচেষ্ট। জনগণের অংশগ্রহণ এবং ঐক্যমত্যই আগামী দিনের সাফল্যের চাবিকাঠি।