বাংলাদেশে আমদানি পণ্য খালাসে নতুন নিয়মের ফলে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাড়তি সময় ও মাশুলের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে আটকে থাকা আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড এবং মেঘনা নুডলস অ্যান্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরির পণ্য চালানগুলোর উদাহরণ এ সমস্যার গুরুত্ব তুলে ধরেছে।
আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড ১১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৩০ কনটেইনার চিনি আমদানি করে। ১৪ জানুয়ারি বিএসটিআই ছাড়পত্রের জন্য আবেদন জমা দেওয়ার পর ১৫ জানুয়ারি নমুনা পরীক্ষার জন্য জমা দেওয়া হয়। তবে ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য ৯ দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে। এতে বন্দরে কনটেইনার রাখা বাবদ ১ লাখ ৭২ হাজার ৮০০ টাকা অতিরিক্ত মাশুল গুনতে হবে।
মেঘনা নুডলস অ্যান্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরি ১২ জানুয়ারি খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য ভেজিটেবল ফ্যাট আমদানি করে। ১৩ জানুয়ারি নমুনা উত্তোলন করা হলেও ছাড়পত্র মিলবে ২৪ জানুয়ারি। ফলে চালানটি বন্দরে ১০ দিন আটকা পড়ে আছে।
২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চালু হওয়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ১৭৫ ক্যাটাগরির পণ্য খালাসে বিএসটিআই ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এখন থেকে নমুনা পরীক্ষার সনদ অনলাইনে জমা না দিলে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব নয়। ফলে প্রতিটি চালানে সময়ক্ষেপণ ও বাড়তি খরচ বেড়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার সাইদুল ইসলাম বলেন, “নমুনা পরীক্ষার বিষয়টি পুরোপুরি বিএসটিআইয়ের ওপর নির্ভরশীল। বিএসটিআই যত দ্রুত ছাড়পত্র দেবে, তত দ্রুত পণ্যের শুল্কায়ন হবে।”
বিএসটিআইয়ের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের প্রধান গোলাম রাব্বানী জানিয়েছেন, সাধারণত নমুনা পরীক্ষা করে ছাড়পত্র দিতে ছয় কার্যদিবস লাগে। তবে নতুন নিয়মে যাতে পণ্য খালাস দ্রুত করা যায়, সে জন্য বিকল্প ব্যবস্থার বিষয়ে আলোচনা চলছে।
বন্দরে চার দিন পর্যন্ত বিনা মাশুলে পণ্য রাখা গেলেও, এরপর থেকে প্রতিটি ২০ ফুট কনটেইনারের জন্য দৈনিক ছয় ডলার মাশুল দিতে হয়। এর বাইরে শিপিং কোম্পানিগুলোকেও কনটেইনার অতিরিক্ত সময় রাখার জন্য ভাড়া দিতে হয়।
শুধু আকিজ বা মেঘনা নয়, অন্যান্য আমদানিকারকরাও একই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। ১৭৫ ক্যাটাগরির পণ্যের মধ্যে গুঁড়া দুধ, পরিশোধিত সয়াবিন তেল, সূর্যমুখী তেল, ত্বক পরিচর্যার সামগ্রীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী রয়েছে। নতুন নিয়মে অনেক চালান আটকে থাকায় বাজারেও সরবরাহ সংকটের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
অনলাইনে নমুনা সনদ জমা দেওয়ার উদ্যোগটি কার্যকর হলেও, ছাড়পত্র পেতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে আমদানিকারকদের ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা দ্রুত নমুনা পরীক্ষার প্রক্রিয়া উন্নত করার দাবি জানিয়েছেন।