ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে সেনাপ্রধানের কার্যালয় থেকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যৌথ বাহিনীর কাছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক ছবিটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ছবিটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হিসেবে পরিচিত ছিল।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া এবং দ্য হিন্দু জানায়, ঐতিহাসিক ছবিটির জায়গায় একটি নতুন চিত্রকর্ম স্থাপন করা হয়েছে। এই চিত্রকর্মের নাম দেওয়া হয়েছে “করম ক্ষেত্র—ফিল্ড অব ডিডস”, যা ভারতীয় সেনাবাহিনীর কৌশলগত দক্ষতা, প্রযুক্তিগত উন্নতি এবং জাতীয় মূল্যবোধের প্রতীক হিসেবে কাজ করবে।
নতুন এই চিত্রকর্মটি ২৮ মাদ্রাজ রেজিমেন্টের কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল থমাস জ্যাকবের আঁকা। এতে ভারতের সামরিক ইতিহাস, প্রাচীন সভ্যতার ন্যায়পরায়ণতা, এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারকে একীভূতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
চিত্রকর্মে উঠে এসেছে—তুষারঢাকা পাহাড় এবং লাদাখের প্যাংগং লেক, হিন্দু পুরাণের গরুড়, কৃষ্ণের রথ এবং চাণক্যের প্রতীকী উপস্থিতি, আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম যেমন ট্যাংক, পেট্রল বোট, দেশীয় লাইট কমব্যাট হেলিকপ্টার এবং অ্যাপাচি অ্যাটাক হেলিকপ্টারের চিত্র।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন সূত্র দ্য হিন্দুকে জানায়, নতুন চিত্রকর্মটি দেশটির সেনাবাহিনীর ন্যায়পরায়ণতার প্রতি চিরস্থায়ী অঙ্গীকার এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা তুলে ধরে। এটি মহাভারতের শিক্ষা ও চাণক্যের কৌশলগত প্রজ্ঞার ভিত্তিতে গড়ে তোলা হয়েছে।
সূত্রটি আরও উল্লেখ করে, “এটি এমন একটি সেনাবাহিনীকে উপস্থাপন করে যারা সাহসী, আধুনিক এবং দেশের সীমানা ও স্বার্থ রক্ষায় সব সময় প্রস্তুত। একই সঙ্গে এটি ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর দৃঢ় সংকল্প ও দক্ষতাকে তুলে ধরে।”
১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ছবিটি যৌথ বাহিনীর কাছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মুহূর্তের প্রতীক। এটি সেনাপ্রধানের কার্যালয়ে প্রায়ই বিদেশি জেনারেল এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে তোলা ছবির পটভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
ভারতীয় সেনাবাহিনী সাম্প্রতিক সময়ে তাদের কর্মকাণ্ডে প্রাচীন ভারতীয় দর্শন এবং কৌশলগত শব্দভান্ডারকে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছে। নতুন চিত্রকর্মটি তারই প্রতিফলন। এতে ভারতের আধুনিক সামরিক ক্ষমতা এবং ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
ঐতিহাসিক ছবির পরিবর্তে নতুন চিত্রকর্ম স্থাপন ভারতের সামরিক ইতিহাস ও সংস্কৃতির পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গির ইঙ্গিত দেয়। এটি সেনাবাহিনীর ঐতিহ্য, প্রযুক্তিগত উন্নতি এবং জাতীয় গৌরবের প্রতি গভীর শ্রদ্ধার প্রতিফলন।