ভারতসহ আশপাশের দেশের তুলনায় বাংলাদেশে যেকোনো প্রকল্পের ব্যয় অনেক বেশি বলে মন্তব্য করেছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। আজ মঙ্গলবার সকালে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঢাকা-খুলনা রুটে নতুন ট্রেনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
রেলওয়ে উপদেষ্টা জানান, রেলের বর্তমান অবস্থার পেছনে অন্যতম কারণ হলো অপব্যয়। তিনি বলেন, “যত্রতত্র রেলস্টেশন নির্মাণ, লাইন বিস্তার করা হয়েছে। কিন্তু সেগুলোর জন্য পর্যাপ্ত ইঞ্জিন, কোচ বা জনবল রয়েছে কি না, তা দেখা হয়নি।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমাদের যেকোনো প্রকল্পের ব্যয় ভারতের তুলনায় এবং আশপাশের দেশের তুলনায় অনেক বেশি। ব্যয় যদি কমানো না যায়, তাহলে রেলসেবা দেওয়ার প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব হবে না। রেলসংশ্লিষ্ট সবাইকে খরচ কমানোর জন্য অনুরোধ করছি।”
রেলপথের বিভিন্ন সংকটের কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, “ইঞ্জিন, কোচ এবং জনবলের সংকট রয়েছে। সীমিত জনবল দিয়ে রেলের কর্মীরা দায়িত্ব পালন করছেন।” তিনি রেলকে তার আয়ের মাধ্যমে ব্যয় নির্বাহ করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, “সরকার বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে, তবে এটি দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নয়।”
পদ্মা রেলসেতু প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা থেকে খুলনা পৌনে চার ঘণ্টায় যাতায়াত সম্ভব হবে বলে উল্লেখ করেন উপদেষ্টা। তিনি প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রকৌশলী, কর্মচারী, মহাপরিচালক এবং বিশেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের অবদানকে স্বীকার করেন।
রেলগাড়ির স্টপেজ বিষয়ে সাধারণ যাত্রীদের উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, “সবাই চান রেলগাড়ি তাঁদের বাড়ির পাশে থামুক। আবার তাঁরা দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতেও চান। এটি বাস্তবসম্মত নয়। যেখানে যাত্রী বেশি, রাজস্ব আসবে, সেখানেই ট্রেন থামাতে হবে।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। এ সময় খুলনা থেকে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস নামে নতুন ট্রেন চালু করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছে। পরে এটি রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস নামে যশোরের বেনাপোলের উদ্দেশে যাত্রা করে।
নতুন ট্রেন চালুর মাধ্যমে যাত্রী সেবার মান আরও উন্নত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন রেল কর্তৃপক্ষ। ট্রেন দুটি দিনে দুবার আসা-যাওয়া করবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাত্রীদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
রেলের সার্বিক উন্নয়নে খরচ নিয়ন্ত্রণ, সেবার মান বৃদ্ধি এবং কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন রেল উপদেষ্টা। নতুন ট্রেন চালুর মাধ্যমে যাত্রী সেবার মান উন্নয়নের পাশাপাশি রেলের আর্থিক স্বাবলম্বিতা অর্জনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।