ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কুশপুত্তলিকা দাহ এবং বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। এ বিষয়ে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি প্রটেস্ট নোট পাঠিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ১৮ ডিসেম্বর ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন থেকে পাঠানো নোটে উল্লেখ করা হয় যে, নরেন্দ্র মোদির কুশপুত্তলিকা দাহ এবং মাহফুজ আলমের ফেসবুক স্ট্যাটাস ভারত সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করেছে।
নোটে বলা হয়, দুই দেশ যখন সম্পর্ক উন্নয়নের ইতিবাচক পদক্ষেপ নিচ্ছে, তখন এমন কর্মকাণ্ড দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ভারত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে।
গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একটি ফেসবুক পোস্টে বাংলাদেশের নাম উল্লেখ না করে ১৯৭১ সালের বিজয়কে ‘ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়’ বলে উল্লেখ করেন।
মোদির ওই পোস্টে সমালোচনার ঝড় ওঠে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা ও ছাত্র সংগঠনগুলো প্রতিবাদে সরব হয়ে ওঠে। এর জেরে ১৮ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদ মশাল মিছিলের আয়োজন করে। মিছিল শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।
বিজয় দিবসের রাতে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটি বিতর্কিত ফেসবুক পোস্ট দেন। পোস্টে তিনি একটি মানচিত্র প্রকাশ করেন, যেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, মণিপুরসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে যুক্ত করা হয়।
তিনি লেখেন, “১৯৪৭ সালের বাংলা ভাগের ধারাবাহিকতায় যে বাংলাদেশ হয়েছে, সেই ভূখণ্ড খণ্ডিত। নতুন ভূখণ্ড ও বন্দোবস্ত লাগবে।”
পোস্টটি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ডিলিট করা হয়। তবে এ বিষয়ে মাহফুজ আলম বা অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য আসেনি।
ভারত সরকারের মতে, এই ঘটনাগুলো দুই দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
নোটে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের একজন উপদেষ্টার এমন স্ট্যাটাস এবং কুশপুত্তলিকা দাহ ভারতের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভারতীয় হাইকমিশনের নোট পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি।
দুই দেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে এই ধরনের ঘটনায় সতর্ক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। কূটনৈতিক চ্যানেলে আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের জন্য উভয় দেশের সরকারের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।