রাজশাহী অঞ্চলের আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা হিমাগারে আলু রাখার ভাড়া দ্বিগুণ বাড়ানোর প্রতিবাদে এক গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশ করেছেন। গত ২৬ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার রাজশাহীর তানোর উপজেলার গোল্লাপাড়া মাঠে আয়োজিত এই সমাবেশে তারা ঘোষণা দিয়েছেন যে, আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে আলুর হিমাগার ভাড়া না কমালে তারা হিমাগার ঘেরাও করবেন।
সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন যে, গত বছরের তুলনায় হিমাগার ভাড়া অযৌক্তিকভাবে বাড়ানো হয়েছে। গত বছর প্রতি কেজি আলুর জন্য হিমাগারে ভাড়া পড়েছিল ৪ টাকা, কিন্তু এবার বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ সমিতি প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ৮ টাকা নির্ধারণ করেছে। তারা বলেন, কৃষকরা ইতিমধ্যে সংকটপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন, এবং এই বাড়ানো ভাড়া কৃষকদের জন্য অত্যন্ত বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।
গত বছরের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে বক্তারা বলেন, হিমাগারে আলু রাখার জন্য বস্তাপ্রতি ‘পেইড বুকিং’-এর ভাড়া ছিল ২১০ থেকে ২২০ টাকা এবং সাধারণ ভাড়া বা ‘লুজ বুকিং’ ছিল ২৮৫ টাকা পর্যন্ত। একটি বস্তায় ৫০ কেজি আলু রাখার নিয়ম থাকলেও, কৃষকরা প্রায় ৬০-৬৫ কেজি আলু রাখতেন। পেইড বুকিংয়ের ভাড়া আলু ওঠার এক বছর আগেই পরিশোধ করতে হতো, আর লুজ বুকিংয়ের ভাড়া আলু হিমাগার থেকে বের করার সময় দিতে হতো। সব মিলিয়ে গড়ে প্রতি কেজি আলুর ভাড়া পড়তো ৫ টাকা।
তবে এবার হিমাগারের মালিকেরা আলুর ভাড়া ৮ টাকা নির্ধারণ করায় চাষিরা ক্ষুব্ধ। তারা বলেন, গত বছর যে ভাড়ায় আলু রেখেছেন, এবারও সেই একই ভাড়ায় আলু রাখতে তারা প্রস্তুত।
বক্তারা আরও বলেন, বিভিন্ন দেশে শিল্পপতিরা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে থাকেন, কিন্তু বাংলাদেশে হিমাগারের মালিকরা কৃষকদের শোষণ করছেন। তাদের মতে, আলু চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় হিমাগারের মালিকরা এক ধরনের সিন্ডিকেট তৈরি করে এই অযৌক্তিক ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা দাবি করেন, এই ভাড়া বৃদ্ধি কৃষকদের জন্য মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।
তানোর আলুচাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন বলেন, “যদি ১০ জানুয়ারির মধ্যে হিমাগারের মালিকেরা আমাদের দাবি না মানেন, তবে আমরা আরও বড় ধরনের সমাবেশ আয়োজন করব এবং হিমাগার ঘেরাও করব।”
রাজশাহী আলুচাষি ও জেলা আলু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নূরুল ইসলাম সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। সমাবেশ শেষে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেন, যাতে দ্রুত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা হিমাগারের মালিকদের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়ে, এই অবিচারের প্রতিবাদে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। তাদের আশা, সরকারের সহায়তায় এই সমস্যা সমাধান হবে, যাতে কৃষকরা সঠিক ভাড়ায় আলু রাখার সুযোগ পায়।
এ বিষয়ে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরোধের সুর বয়ে চলছে, এবং তারা সরকারের কাছ থেকে দ্রুত সমাধান আশা করছেন।