উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের বোন কিম ইয়ো জং যুক্তরাষ্ট্রের “উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড” বৃদ্ধির কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, এসব কর্মকাণ্ড উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট ন্যায্যতা প্রদান করছে। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ মঙ্গলবার এ তথ্য জানায়।
এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস ভিনসন রবিবার দক্ষিণ কোরিয়ার বন্দরনগরী বুসানে নোঙর করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার নৌবাহিনী জানিয়েছে, এই পদক্ষেপ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি মার্কিন সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ।
কিম ইয়ো জং এই ঘটনাকে ‘সংঘাত নীতির’ অংশ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশ সংঘাতের রাস্তায় যেতে চায়। দক্ষিণ কোরিয়া আত্মঘাতী পথে চলছে।’ তিনি আরও বলেন, উত্তর কোরিয়া এখন সব বিকল্প খতিয়ে দেখবে এবং তাদের নিরাপত্তা যাতে শত্রুরা বিঘ্নিত করতে না পারে, তা নিশ্চিত করবে।
কেসিএনএ-এর প্রতিবেদনে কিম ইয়ো জং বলেছেন, ‘এই বছর নতুন প্রশাসন আবির্ভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ডিপিআরকে-এর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও সামরিক উস্কানি বাড়িয়েছে, যা পূর্ববর্তী প্রশাসনের শত্রুতাপূর্ণ নীতিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।’
ডিপিআরকে (DPRK) হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার সরকারি নাম ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অফ কোরিয়া-এর সংক্ষিপ্ত রূপ।
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ডিপিআরকে-এর প্রতি যে শত্রুতাপূর্ণ নীতি অনুসরণ করছে, তা আমাদের পারমাণবিক যুদ্ধ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করার জন্য যথেষ্ট ন্যায্যতা প্রদান করছে।’
উত্তর কোরিয়ার এই বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র কখনই গ্রহণযোগ্য নয় এবং দেশটির একমাত্র বেঁচে থাকার উপায় হলো পারমাণবিক কর্মসূচি পরিত্যাগ করা।’
জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এই প্রথম কোনো মার্কিন বিমানবাহী রণতরি দক্ষিণ কোরিয়ার বন্দরে ভিড়ল। পারমাণবিক শক্তিচালিত এই নৌযান Carrier Strike Group 1-এর অন্তর্গত। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইউএসএস প্রিন্সটন (ক্রুজার ক্ষেপণাস্ত্র) ও ইউএসএস স্টেরেট (ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী)।
কিম ইয়ো জং যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের যৌথ মহড়ার অংশ হিসেবে কোরীয় উপদ্বীপে মার্কিন বি-১বি কৌশলগত বোমারু বিমান মোতায়েনেরও সমালোচনা করেছেন। পাশাপাশি, মিউনিখে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা সম্মেলনে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানিয়ে তিন মিত্র (যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান)-এর প্রতিশ্রুতিরও সমালোচনা করেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রথমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হন, তখন তিনি উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে শীর্ষবৈঠক করেন। এবারও ট্রাম্প বলেছেন, তিনি কিম জং উনের সঙ্গে দেখা করতে চান। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, কিম এবার রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করতে চাইছেন এবং আগের মতো ট্রাম্পের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা নাও করতে পারেন।
কিম ইয়ো জং-এর সাম্প্রতিক বক্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে, উত্তর কোরিয়া এখন তার পারমাণবিক কর্মসূচিকে আরও শক্তিশালী করার দিকে মনোযোগ দেবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সামরিক উপস্থিতির জবাবে উত্তর কোরিয়া নতুন ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বা সামরিক মহড়া চালাতে পারে।