ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নের পর গাজার দিকে মানবিক ত্রাণ প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৬৩০টিরও বেশি ট্রাক গাজার ভেতরে প্রবেশ করেছে, যার মধ্যে অন্তত ৩০০টি ট্রাক গাজার উত্তরাঞ্চলে পৌঁছেছে। এই ত্রাণের মধ্যে খাদ্য, পানি, মেডিকেল সামগ্রীসহ মানবিক সহায়তার নানা উপকরণ রয়েছে, যা যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
জাতিসংঘের মানবিক-বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল টম ফ্লেচার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে বলেন, “এটি একটি বিশেষ মুহূর্ত। আমরা জানি, সময় খুবই সীমিত এবং মানুষের প্রয়োজন অত্যন্ত তীব্র। আমাদের সামনে আর সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই।”
এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, গাজায় দীর্ঘ ১৫ মাসের যুদ্ধের পর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পুনরুদ্ধার একটি অত্যন্ত জটিল এবং চ্যালেঞ্জিং কাজ হবে। স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এবং আঘাতপ্রাপ্ত বহু মানুষের চিকিৎসা প্রক্রিয়া খুবই বিপদাপন্ন হয়ে পড়েছে।
গাজায় গতকাল (রোববার) থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও, অনেক ফিলিস্তিনি পরিবার বাড়িতে ফিরতে শুরু করলেও তারা একে অপরকে দেখতে পাচ্ছে এক ভয়াবহ চিত্র। তাদের বাড়িগুলি এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলি হামলার ফলে গাজা অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং প্রায় ৪৬,৯১৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার মধ্যে অনেকেই ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়েছেন। আহতদের সংখ্যা ১ লাখ ১০ হাজার ৭৫০ জনের বেশি, তবে আহতদের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, গাজার ৯২ শতাংশ বাড়ি অথবা সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪ লাখ ১৬ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ১ লাখ ৬০ হাজার বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে, এবং ২ লাখ ৭৬ হাজার বাড়ি আংশিক বা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বহু ফিলিস্তিনির জীবনের স্মৃতি এবং সম্পদ মুছে গেছে।
যুদ্ধবিরতি এবং মানবিক সহায়তার প্রবাহ সত্ত্বেও গাজার মানুষদের জন্য পরিস্থিতি এখনও অত্যন্ত কঠিন। ঘরবাড়ি, জীবন, পরিবার হারানো, এবং প্রয়োজনীয় সাহায্য ও পুনর্গঠন ব্যবস্থার অভাব তাদের সামনে বিশাল চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তা গাজাবাসীদের পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।