চট্টগ্রাম আদালত থেকে নিখোঁজ হওয়া ১ হাজার ৯১১ মামলার নথির (কেস ডকেট-সিডি) মধ্যে ৯ বস্তা গতকাল বুধবার রাতে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল করিম।
ওসি আবদুল করিম আজ বৃহস্পতিবার সকালে বলেন, চট্টগ্রাম আদালতের হত্যা, মাদক, চোরাচালান ও বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন মামলার সিডি গায়েবের ঘটনায় অভিযান চালিয়ে একজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁর কাছ থেকে ৯ বস্তা কেস ডকেট উদ্ধার করা হয়েছে। তবে আটককৃত ব্যক্তির পরিচয় এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, নথি গায়েবের ঘটনায় বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে। পুলিশ এখনো অভিযান চালাচ্ছে।
নথি গায়েবের ঘটনায় গত রোববার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মফিজুল হক ভূঁইয়া নগরের কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
জিডিতে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম মহানগর পিপি কার্যালয়ে ২৮ থেকে ৩০টি আদালতের কেস ডকেট সংরক্ষিত ছিল। তবে স্থানস্বল্পতার কারণে ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে পিপি কার্যালয়ের সামনের বারান্দায় পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় ১ হাজার ৯১১টি মামলার কেস ডকেট প্লাস্টিকের বস্তায় রাখা হয়েছিল।
আদালতের অবকাশকালীন ছুটির সময় অফিস বন্ধ থাকায় ১৩ থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নথিগুলো হারিয়ে যায়। নথি খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় মহানগর পিপির কার্যালয় অবস্থিত। এই কার্যালয়ের পাশে মহানগর দায়রা জজ আদালতের এজলাস ও খাসকামরা রয়েছে। আদালত ভবনটি দিনভর আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী ও সাধারণ মানুষের পদচারণায় মুখর থাকে। তবে সন্ধ্যার পর আদালত ভবনটি ফাঁকা হয়ে যায়।
আইন অনুযায়ী, সন্ধ্যার পর আদালত ভবনে নিরাপত্তা জোরদার থাকার কথা। কিন্তু এই সুরক্ষিত ভবন থেকেই বারান্দায় রাখা ১ হাজার ৯১১ মামলার গুরুত্বপূর্ণ নথি হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন আইনজীবীরা।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির কয়েকজন সদস্য এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আদালতের গুরুত্বপূর্ণ নথি চুরি হওয়া চট্টগ্রামের বিচারিক ব্যবস্থার জন্য বড় ধরনের হুমকি। তাঁরা দ্রুত এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানান।
চট্টগ্রাম আদালতে গায়েব হওয়া মামলার নথিগুলোতে হত্যা, মাদক, চোরাচালান ও বিস্ফোরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ মামলার তথ্য ছিল। এসব নথি হারিয়ে যাওয়ায় মামলার কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন আইনজীবীরা।
তবে পুলিশ বলছে, অধিকাংশ নথি উদ্ধার করা হয়েছে এবং আটক ব্যক্তির কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।
আইনজীবীরা আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, গুরুত্বপূর্ণ নথি বারান্দায় রেখে দেওয়া কোনোভাবেই নিরাপদ ছিল না। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন।