ঢাকায় দুইদিনব্যাপী জাতীয় সংলাপে ‘ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন’ শিরোনামে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ (এফবিএস) এর উদ্যোগে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। গত ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত এই সংলাপে জুলাই অভ্যুত্থানে সংগঠিত গণহত্যার বিচার আগামী বছরের বিজয় দিবসের আগেই নিষ্পত্তির দাবি জানানো হয়।
এফবিএস এর পক্ষ থেকে এক প্রেস-বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই বিচার দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং তদন্ত সংস্থার সক্ষমতা ও পরিধি বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করারও দাবি জানানো হয়।
সংলাপে অংশগ্রহণকারী সকলেই একমত পোষণ করেছেন যে, দেশের রাজনৈতিক দুর্নীতি ও লুটপাটের যথাযথ তদন্ত এবং বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা উচিত। এর জন্য ঢাকাসহ বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে বিশেষ আদালত স্থাপন এবং বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ টিম নিয়োগেরও দাবি তোলা হয়।
এছাড়া, রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনী সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা এবং ঐক্য বজায় রাখার জন্য একটি লিয়াঁজো কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়। সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, তারা সংকীর্ণ স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থে ঐক্য বজায় রাখবে এবং সংস্কারের মাধ্যমে একটি ন্যায্য নির্বাচন নিশ্চিত করবে।
সংলাপে আরও দাবি জানানো হয়েছে যে, সরকারি প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে বহাল থাকা ফ্যাসিস্ট শাসকদের সমর্থকদের অবিলম্বে সরিয়ে দেওয়া উচিত এবং বিগত ১৬ বছরে চাকরিচ্যুতি ও বঞ্চনার শিকার কর্মচারীদের পুনর্বহাল করা উচিত। একইসঙ্গে, গণহত্যায় আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে এবং শহীদ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর দায়িত্ব রাষ্ট্রের ওপর ন্যস্ত করার আহ্বান জানানো হয়।
এছাড়া, সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের সব ধরনের নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে একমত পোষণ করেন। তারা আশা প্রকাশ করেন যে, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক ও কল্যাণমুলক রাষ্ট্র গঠনে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
সংলাপ শেষে, জাতীয় সমৃদ্ধি এবং নাগরিকদের নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ জীবনের জন্য সভ্য রাজনীতির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে এটি সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।