মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বিশ্বব্যাপী ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক আরোপ করার ঘোষণা দিয়েছে, যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাপান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়ায়া এই শুল্ককে “দুঃখজনক” বলে উল্লেখ করেছেন এবং জাপানের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, মার্কিন-জাপান সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এ ধরনের শুল্ক আরোপ করা হলে তা উভয় দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থের পরিপন্থী হবে।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের ফাঁকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা করেন তাকেশি ইওয়ায়া। বৈঠকে তিনি জাপানের উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রকে জাপানের ওপর পরিকল্পিত শুল্ক থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান।
জাপানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কিয়োডো নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তাকেশি ইওয়ায়া বলেন, জাপান মনে করে, এই শুল্ক দুই দেশের দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। মার্কিন প্রশাসনের উচিত এই শুল্কের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা এবং জাপানকে অব্যাহতি দেওয়া। মার্কো রুবিও আশ্বাস দিয়েছেন যে, জাপানের উদ্বেগ ওয়াশিংটনের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা দেন যে, বিশ্বব্যাপী ইস্পাত আমদানির ওপর ২৫% শুল্ক এবং অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ১০% শুল্ক আরোপ করা হবে। ১৩ মার্চ থেকে এই শুল্ক কার্যকর হয়েছে, যা জাপানসহ বিভিন্ন দেশকে প্রভাবিত করছে।
জাপান যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার। দেশটি বিশাল পরিমাণে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম রপ্তানি করে। তবে নতুন শুল্কের কারণে জাপানের রপ্তানি খাতে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে, জাপানের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম শিল্পের জন্য এটি বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনে করেন, এই শুল্ক শুধুমাত্র বাণিজ্যের ওপর নয়, বরং দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই জাপান যুক্তরাষ্ট্রকে শুল্ক থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য জোরালো অনুরোধ জানিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও স্বীকার করেছেন যে, মার্কিন-জাপান সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে, টোকিওর উদ্বেগ মার্কিন প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে পৌঁছানো হবে এবং এই বিষয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে।
বিশ্ব অর্থনীতিতে জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উভয় দেশ একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রেখে আসছে। তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন বাণিজ্য নীতির কারণে বিশ্ববাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে এবং এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বর্তমানে জাপান মার্কিন প্রশাসনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। যদি ট্রাম্প প্রশাসন জাপানকে শুল্ক থেকে অব্যাহতি দেয়, তবে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও দৃঢ় হতে পারে। তবে যদি শুল্ক কার্যকর থাকে, তাহলে জাপানের অর্থনীতির ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে এবং দেশটি এর বিরুদ্ধে বিকল্প কৌশল গ্রহণ করতে বাধ্য হতে পারে।