“আমরা নারী” এবং “আমরা নারী রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট” এর যৌথ উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের অডিটোরিয়ামে স্তন ক্যান্সার সচেতনতা বিষয়ক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর বিকেল ৩টায় আয়োজিত এই সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন শ্রেণির বিশেষজ্ঞ এবং শিক্ষার্থীরা। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজে অধ্যায়নরত জান্নাতুল ইসলাম ননীমা।
সেমিনারে রিসোর্স পার্সন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসায় অভিজ্ঞ ডা. উম্মে হুমায়রা কানেতা। সেমিনারের আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট ড. মাহবুবা সুলতানা, প্রক্টর শফিউদ্দিন আহমেদ, আইটি কনসালটেন্ট মো. সামিউল ইসলাম হিরণ, ট্রেনিং ডিরেক্টর শহীদুল্লাহ স্বপন, এবং “আমরা নারী” ও “আমরা নারী রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট”-এর প্রতিষ্ঠাতা এম এম জাহিদুর রহমান (বিপ্লব)।
এ সময় জানানো হয়, অক্টোবর মাসকে বিশ্বের স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস হিসেবে পালিত করা হয়। এই উপলক্ষে “আমরা নারী” এবং “আমরা নারী রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট” অক্টোবর ও নভেম্বর মাসজুড়ে দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বক্তারা জানান, স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক স্তরে শনাক্তকরণের জন্য নারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সমাজে স্তন ক্যান্সার নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা দূর করার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
বিশেষজ্ঞরা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি ও লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তারা জানান, স্তনে বা বগলে চাকা বা গোটার উপস্থিতি, স্তনের চামড়া কুঁচকে যাওয়া, স্তনের আকার পরিবর্তন এবং স্তনের বোঁটা থেকে অস্বাভাবিক রস বের হওয়া এসব লক্ষণ হতে পারে স্তন ক্যান্সারের পূর্বাভাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজার নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে ৭ হাজার ৫০০ জনের মৃত্যু ঘটে।
ডা. উম্মে হুমায়রা কানেতা সেমিনারে উপস্থিতদের বলেন, স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা প্রাথমিক পর্যায়ে শুরু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক জ্ঞান ও সচেতনতার অভাবে অনেক সময় নারীরা দেরিতে চিকিৎসা নিতে শুরু করেন। সেমিনারে জানানো হয় যে, ২০ বছর বয়স থেকে নারীদের প্রতি মাসে একবার নিজের স্তন পরীক্ষা করা উচিত। ৪০ বছর বয়সের পর প্রতি বছর একবার ম্যামোগ্রাম পরীক্ষা করানো প্রয়োজন, যা স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণে সহায়ক হতে পারে।
“আমরা নারী” একটি অরাজনৈতিক এবং অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, যা নারীদের স্বাস্থ্য, ক্ষমতায়ন, কল্যাণ এবং সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে। এর সহযোগী সংগঠন “আমরা নারী রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট” স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নিরাপদ খাদ্য এবং নারীর অধিকার সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধিতে নিয়োজিত। এই উদ্যোগে ইত্তেফাক, বাংলাদেশ পোস্ট, একাত্তর টিভি এবং ঢাকা মেইল মিডিয়া পার্টনার হিসেবে যুক্ত হয়েছে।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা জাহিদুর রহমান বিপ্লব সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের জানান, তারা ধারাবাহিকভাবে তরুণ সমাজের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে এই ধরনের সেমিনার আয়োজন করবেন। তিনি বলেন, “আমরা এই সেমিনারগুলোর মাধ্যমে তরুণ সমাজের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনা গড়ে তোলার চেষ্টা করছি, যাতে ভবিষ্যতে একটি স্বাস্থ্য সচেতন প্রজন্ম তৈরি করা যায়।”
এ ধরনের সচেতনতা সেমিনার নারীস্বাস্থ্য নিয়ে একটি বড় পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে, বিশেষত স্তন ক্যান্সারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আগামী দিনে এই ধরনের উদ্যোগে দেশের নারীরা আরও সজাগ ও সচেতন হয়ে উঠবেন, যা তাদের স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপনে সহায়ক হবে।