নামিবিয়ার ক্ষমতাসীন দল এসডব্লিউএপিও (সাউথ ওয়েস্ট আফ্রিকা পিপলস অর্গানাইজেশন) দলের নেত্রী নেতুম্বো নান্দি নাদাইতওয়া দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে তিনি হবেন নামিবিয়ার ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দেশটির নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করে। এই ফলাফল নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।
৭২ বছর বয়সী নান্দি নাদাইতওয়া বর্তমানে নামিবিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রেসিডেন্ট পদে তার বিজয়ের ফলে এসডব্লিউএপিও দলের ক্ষমতায় থাকার মেয়াদ আরও বৃদ্ধি পেল। উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে এই দলটির নেতৃত্বেই নামিবিয়া দক্ষিণ আফ্রিকার কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে। এরপর থেকে ৩৪ বছর ধরে দলটি ক্ষমতায় রয়েছে।
নামিবিয়ার নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নান্দি নাদাইতওয়া ৫৭ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। প্রেসিডেন্ট পদে জয়লাভের জন্য প্রার্থীর কমপক্ষে ৫০ শতাংশ ভোট পাওয়ার প্রয়োজন ছিল। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী পান্দুলেনি ইতুলা, ইনডিপেনডেন্ট প্যাট্রিয়টস ফর চেঞ্জ (আইপিসি) দলের নেতা, ২৬ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন।
জাতীয় পরিষদ নির্বাচনেও এসডব্লিউএপিও দলের জয়ধ্বনি শোনা গেছে। দলটি ৯৬টি আসনের মধ্যে ৫১টি আসনে জয়ী হয়ে পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। তবে আইপিসি ২০টি আসন পেয়ে জাতীয় পরিষদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে উঠে এসেছে।
আইপিসি নির্বাচনের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। দলটি নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ বলে দাবি করেছে।
জয়ের পর এক ভাষণে নাদাইতওয়া বলেন, “নামিবিয়ার জনগণ শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য ভোট দিয়েছেন।” তিনি আরও বলেন, তার দায়িত্ব হবে দেশের মানুষের ঐক্য এবং দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
ষাটের দশকে এসডব্লিউএপিওতে যোগদানের সময় নান্দি স্বাধীনতার জন্য লড়াইরত একটি আন্দোলনের সদস্য ছিলেন। নামিবিয়ার গণতান্ত্রিক যুগ শুরু হওয়ার পর তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশ্লেষকেরা তার পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির কথা উল্লেখ করেছেন।
বিশ্লেষক রাক্কেল আন্দ্রিয়াস বলেন, “নান্দি নাদাইতওয়া এসডব্লিউএপিওর বিভক্ত বিভিন্ন অংশকে একত্রিত করেছেন এবং দলের অন্য অনেক নেতার মতো তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নেই।”
নামিবিয়ার এবারের নির্বাচন গত ২৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। তবে ভোট গ্রহণ চলাকালে কিছু কারিগরি সমস্যা এবং ব্যালট পেপারের সংকটের কারণে ভোটগ্রহণের সময় বাড়ানো হয়। এতে ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব ঘটে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এসডব্লিউএপিওর জয় নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা ছিল। কারণ, দেশের বেকারত্ব এবং অর্থনৈতিক অসমতা নিয়ে মানুষের হতাশা দিন দিন বাড়ছিল। তবে জাতীয় মুক্তিসংগ্রামে ভূমিকা রাখার কারণে গ্রামীণ এলাকাগুলোর ভোটারদের মধ্যে এসডব্লিউএপিওর শক্ত অবস্থান রয়েছে।
নামিবিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নাদাইতওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। তার নেতৃত্বে নামিবিয়া কীভাবে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখে, সেটি দেখার বিষয়।