দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং তাঁর পরিবারের আট সদস্যের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে। এই অনুসন্ধানের প্রেক্ষিতে বিদেশে তাঁদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করার জন্য আদালত আদেশ দিয়েছেন।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মীর আহমেদ আলী সালাম জানিয়েছেন, ঢাকার আদালত ২১ অক্টোবর আহমেদ আকবর সোবহানসহ তাঁর পরিবারের আট সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন। এর আগে ৬ অক্টোবর তাঁদের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আদালত আরও আদেশ দিয়েছেন, এই জব্দের আদেশ সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, স্লোভাকিয়া, সাইপ্রাস, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছে পাঠাতে।
এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুদক এবং বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) অনুরূপ অনুলিপি সরবরাহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে যে, আহমেদ আকবর সোবহান এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা মালিকানাধীন বিভিন্ন কোম্পানির নামে বিপুল পরিমাণ ব্যাংকঋণ নিয়েছেন। এই ঋণের একাংশ বিদেশে পাচার করে সেখানে সম্পদ কেনা হয়েছে এবং বিভিন্ন দেশে ১৯টি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে।
সায়েম সোবহান আনভীর (পরিবারের এমডি) স্লোভাকিয়ায় ৩০ লাখ ইউরো বিনিয়োগ করে নাগরিকত্ব পেয়েছেন। ইয়াশা সোবহান (সায়েমের স্ত্রী) সাইপ্রাসে ২০ লাখ ইউরো বিনিয়োগ করে নাগরিকত্ব পেয়েছেন। আহমেদ আকবর সোবহান এবং আফরোজা বেগম (তাঁর স্ত্রী) সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসে আড়াই লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে নাগরিকত্ব পেয়েছেন।
সাফওয়ান সোবহান এবং তাঁর স্ত্রী সোনিয়া ফেরদৌসী সোবহান সংযুক্ত আরব আমিরাতের হাবিব ব্যাংক এবং সাইপ্রাসের ইউরো ব্যাংকে অবৈধ অর্থ লেনদেন করেছেন। দুদক জানিয়েছে, বিদেশে তাঁদের নামে আরও সম্পদ কেনা ও ব্যাংক হিসাব রয়েছে, যার আর্থিক পরিমাণ এখনো নির্দিষ্ট করা হয়নি।
দুদক বলছে, বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে সংশ্লিষ্ট দেশের সংস্থাগুলোকে আদালতের এই আদেশ দেখাতে হবে। এ বিষয়ে মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, আদালতের এই আদেশ পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার প্রক্রিয়াকে সহজ করবে।
দুদকের আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই অনুসন্ধানের মূল উদ্দেশ্য জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের যথাযথ ব্যবস্থাপনা এবং অবৈধ অর্থপাচার রোধ করা। দেশের সম্পদ রক্ষায় এই পদক্ষেপকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।