ভারতীয় অর্থনীতি বর্তমানে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার তুলনায় কমে ৫.৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত ১৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। পূর্বাভাসে যেখানে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধির আশা করা হয়েছিল, বাস্তবে তা হতাশাজনক অবস্থায় রয়েছে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমার সরাসরি প্রভাব পড়েছে রুপির মূল্যে। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) মার্কিন ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির বিনিময় হার দাঁড়ায় ৮৪.৭৫ রুপিতে, যা ইতিহাসের সর্বনিম্ন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরবিআই হস্তক্ষেপ না করলে রুপির মান আরও কমতে পারত।
রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে ডলার বিক্রি করে বাজার থেকে রুপি প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছে, যার ফলে রুপির দরপতন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে ধারাবাহিক দরপতন নিয়ে ব্যবসায়ী মহলে উদ্বেগ বিরাজ করছে। কয়েক মাস ধরে আরবিআই বাজারে হস্তক্ষেপ করে রুপির মান ধরে রাখার চেষ্টা করছে।
রুপির মান কমায় আমদানি করা পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। বিদেশে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরা এবং আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এর পাশাপাশি রপ্তানি খাতও ব্যাপক চাপের মুখে রয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমার পেছনে বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগ (এফপিআই) সংকোচনের ভূমিকা রয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক চাপও রুপির মান হ্রাসে প্রভাব ফেলেছে। ব্রিকস অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো যদি একটি সাধারণ মুদ্রা চালু করে, তবে আমদানি করা পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর প্রভাবেও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
টানা আট সপ্তাহ ধরে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে রয়টার্স। এই রিজার্ভ কমা রুপির দরপতন আরও বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভারতীয় অর্থনীতির বর্তমান এই সংকট সামলাতে আরও কার্যকর নীতি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধার এবং রুপির মান স্থিতিশীল করতে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির প্রয়োজনীয়তাও উঠে আসছে।