ভারতের উত্তরপ্রদেশের সামভাল এলাকায় একটি শতাব্দী প্রাচীন মসজিদে সমীক্ষা পরিচালনা নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। হিন্দুদের দাবি, মসজিদটি মুঘল আমলে একটি হিন্দু মন্দির ভেঙে তৈরি করা হয়েছিল, আর এই দাবির প্রেক্ষিতে সরকারি কর্তৃপক্ষ মসজিদে সমীক্ষা শুরু করে।
এ ঘটনার পর মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সংবাদমাধ্যম দ্য ডন জানিয়েছে, সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ছয়জনে পৌঁছেছে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট চিরাগ গয়াল জানিয়েছেন, রোববারের সংঘর্ষে প্রায় ২০ জন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন।
সমীক্ষা নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, যখন আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (এএসআই) মসজিদে সমীক্ষা করার উদ্যোগ নেয়। স্থানীয় মুসলিম বাসিন্দারা বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে। বিক্ষোভ চলাকালে বন্দুকের গুলিতে ছয় মুসলিম নিহত হন। তবে চিরাগ গয়াল দাবি করেছেন, নিহতরা নিজেদের তৈরি পিস্তল থেকে গুলি চালিয়েছেন, আর পুলিশ শুধুমাত্র কাঁদানে গ্যাস এবং রাবার বুলেট ব্যবহার করেছে।
প্রাথমিকভাবে দুজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও, আহতদের মধ্যে আরও দুজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ছয়জনে দাঁড়িয়েছে। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এ ঘটনাটি হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলোর দীর্ঘদিনের দাবির সঙ্গে সম্পর্কিত, যেখানে তারা দাবি করে আসছে যে মুঘল শাসনামলে হিন্দুদের বহু মন্দির ভেঙে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। সামভালের এই মসজিদ নিয়ে আদালতে মামলা হয়, এবং হিন্দু পুরোহিতদের দায়ের করা পিটিশনে বলা হয়, মসজিদটি একটি পুরনো হিন্দু মন্দিরের জায়গায় তৈরি। উত্তরপ্রদেশের একটি আদালত এই অভিযোগের ভিত্তিতে মসজিদে সমীক্ষা চালানোর নির্দেশ দেয়।
এদিকে, ১৯ নভেম্বর প্রথমবার মসজিদে সমীক্ষা করা হয়, আর ২৩ নভেম্বর দ্বিতীয়বার সমীক্ষা শুরু হলে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। সমীক্ষার সময় ছবির ও ভিডিও ধারণের কাজ চলাকালে সহিংসতা ঘটে, যা শেষ পর্যন্ত প্রাণহানির ঘটনা ঘটায়।
এই মসজিদটি ১৫২৬ সালে মুঘল সম্রাট বাবর ও হুমায়ুনের শাসনামলে নির্মিত হয়, এবং ঐতিহাসিকদের মতে, এটি ১৭শ শতকে সংস্কার করা হয়েছিল। পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এই শাহী জামা মসজিদটি স্থানীয় মুসলিমদের মধ্যে একটি পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়, এবং মসজিদে সমীক্ষার উদ্যোগ তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
এ ঘটনায় সামভাল জুড়ে এখন কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।