বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ২০২৪ সালের ওয়ানডে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ৩২১ রানের চমৎকার সংগ্রহ করেও ৪ উইকেটে হেরে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচেও পরাজিত হলো। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের অসাধারণ ব্যাটিং দক্ষতায় মাত্র ৪৫.৫ ওভারে ৩২৫ রান তুলে ম্যাচটি জিতে নেয়। এই জয়ে ক্যারিবীয় দল ৩–0 ব্যবধানে সিরিজ নিজেদের করে নেয়।
ম্যাচটি বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জন্য। সম্ভবত ক্যারিয়ারের শেষবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে খেলতে নেমে তিনি ৬৩ বলে অপরাজিত ৮৪ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন। তাঁর ইনিংসে ছিল ৪টি ছক্কা ও ৩টি চারের মার। এই ইনিংসের মাধ্যমে মাহমুদউল্লাহ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বাধিক ছক্কা মারার রেকর্ড নিজের করে নেন। তাঁর ছক্কার সংখ্যা এখন ১০৭, যা তামিম ইকবালের ১০৩ ছক্কাকে পেছনে ফেলেছে।
সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে মাহমুদউল্লাহর পরিসংখ্যান অভাবনীয়। এ মাঠে ৬ ইনিংসে তিনি ৩৪১ রান করেছেন, গড় ১৭০.৫০। তাঁর ৬ ইনিংসে ৫টি ফিফটি এবং ৪ বার অপরাজিত থাকার মতো ঈর্ষণীয় পারফরম্যান্স ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপকে বলতে বাধ্য করেছে, ‘তাকে সেন্ট কিটসের নাগরিকত্ব দেওয়া হোক।’
বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংসের শুরুটা যদিও হতাশাজনক ছিল। লিটন দাস ও তানজিদ হাসান উভয়েই শূন্য রানে আউট হন। তবে সৌম্য সরকার (৭৩) এবং অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ (৭৭) তৃতীয় উইকেটে ১৩৬ রানের পার্টনারশিপ গড়ে বড় সংগ্রহের ভিত গড়েন। পরবর্তী সময়ে মাহমুদউল্লাহ ও জাকের আলী মিলে ষষ্ঠ উইকেটে ১৫০ রানের পার্টনারশিপ গড়েন। জাকের আলীও ৬২ রানে অপরাজিত থেকে নিজের প্রথম ওয়ানডে ফিফটি পূর্ণ করেন।
শেষ ৪ ওভারে বাংলাদেশ তুলেছিল ৫৯ রান, যা দলের সংগ্রহ ৩০০ পেরোতে সাহায্য করে। বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ৫০ ওভারে ৩২১/৫ রানে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস শুরু হয়েছিল কিছুটা নড়বড়ে। ১০০ রানের মধ্যে তারা হারায় ৪ উইকেট। কিন্তু আমির জাঙ্গু (১০৪) ও কিসি কার্টি (৯৫) দলের হাল ধরেন। দুইজনের পার্টনারশিপ বাংলাদেশের বোলারদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। বিশেষ করে, অভিষেকে আমির জাঙ্গু ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করে ইতিহাস গড়েন। ১৬তম ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেকে সেঞ্চুরি করার কীর্তি গড়েন তিনি। গুড়াকেশ মোতি (৪৪) তাঁর মারমুখী ব্যাটিং দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সহজ জয়ে পৌঁছে দেন।
৪৫.৫ ওভারে ৩২৫ রান তুলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচটি জিতে নেয়, যা এই মাঠে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রান তাড়া করার রেকর্ড। একই সঙ্গে এটি বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করার ঘটনাও।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে রিশাদ হোসেন ২টি উইকেট তুলে নেন। তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ ও নাসুম আহমেদ প্রত্যেকে একটি করে উইকেট শিকার করেন। তবে স্পিনাররা বল গ্রিপ করতে সমস্যায় পড়েন, যা রান রোধ করতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
এই সিরিজে বাংলাদেশের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে। বিশেষ করে ব্যাটিং ইউনিটের ধারাবাহিকতা এবং বোলিং আক্রমণে বৈচিত্র্যের প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তিন বছর নয় মাস পর বাংলাদেশ আবার কোনো ওয়ানডে সিরিজে ধবলধোলাই হলো। এর আগে ২০২১ সালের মার্চে নিউজিল্যান্ড সফরে এমন হার দেখেছিল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩২১/৫
(মাহমুদউল্লাহ ৮৪*, মিরাজ ৭৭, সৌম্য ৭৩, জাকের ৬২*; জোসেফ ২/৪৩, রাদারফোর্ড ১/৩৭, মোতি ১/৬৪)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪৫.৫ ওভারে ৩২৫/৬
(জাঙ্গু ১০৪*, কার্টি ৯৫, মোতি ৪৪*, রাদারফোর্ড ৩০; রিশাদ ২/৬৯, তাসকিন ১/৪৯, হাসান ১/৫২, নাসুম ১/৫৬)।
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪ উইকেটে জয়ী।