মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) দেশটির সামরিক জান্তা সরকারের প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং-এর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে।
হেগভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি করিম খান, স্থানীয় সময় বুধবার (২৭ নভেম্বর), বিচারকদের প্রতি এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানান। তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং বিশ্বের অন্যান্য মানুষের মতো তাদেরও আইনের আশ্রয় পাওয়ার অধিকার রয়েছে। রোহিঙ্গাদের ভুলে যাওয়া হয়নি, এবং আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাবো।”
২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযানে লাখ লাখ রোহিঙ্গা গণহত্যা, দলবদ্ধ ধর্ষণ, হত্যা, এবং বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের শিকার হন। এই অভিযানের ফলে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।
২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চি-কে ক্ষমতাচ্যুত করেন মিন অং হ্লাইং। সামরিক বাহিনী (তাতমাদাও) এবং জাতীয় পুলিশকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালানোর নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে।
আইসিসি’র প্রধান প্রসিকিউটর করিম খান বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি জানান, আদালতের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে সংঘটিত অপরাধের বিচার করার এখতিয়ার রয়েছে আইসিসি’র।
২০১৮ সালে আদালতের বিচারকরা রায় দেন যে, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে সংঘটিত অপরাধের তদন্ত করা যাবে, যেমন জোরপূর্বক রোহিঙ্গা নির্বাসন। করিম খান জানিয়েছেন, শিগগিরই তিনি মিয়ানমারের সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আরও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করবেন।
মিয়ানমার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য নয়। তবে, বাংলাদেশ সদস্য হওয়ায় এবং নিপীড়নের ফলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আদালতের এখতিয়ার রয়েছে। করিম খান বলেন, এই পরোয়ানা জারি হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবে কাজ করবে।
গণহত্যা, দলবদ্ধ ধর্ষণ, হত্যা, এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আশ্রয়, জোরপূর্বক নির্বাসনের মতো অপরাধের তদন্ত এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সংঘটিত বর্বরতা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরে এসেছে। আইসিসি’র এই উদ্যোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হতে পারে। মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়ানোর জন্য এটি একটি বড় অগ্রগতি।