মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের পুনর্বাসন সহায়তা প্রদান করতে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই অধিদপ্তরের মাধ্যমে নিহতদের পরিবারের সদস্য এবং আহতদের জন্য মাসিক ও এককালীন ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ভাতা নির্ধারণ করবে এবং নিহতের পরিবারের কর্মক্ষম সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।
বর্তমানে অধিদপ্তর গঠনের জন্য ১৩ পৃষ্ঠার খসড়া নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে, তবে স্থান ও ভবন এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ৬৩ জনের জনবল কাঠামো অনুমোদনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর অধিদপ্তরের কার্যক্রম শুরু হবে।
নতুন নীতিমালার খসড়ায় শহীদ ও আহতদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শহীদদের পরিবার এবং গুরুতর আহতদের পুনর্বাসন প্রয়োজনীয়তায় ভাতা এবং চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করা হবে। তাছাড়া, আহতদের বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে বিভক্ত করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। ক্যাটেগরি ‘এ’: আজীবন সহায়তা প্রদান করা হবে, যারা সম্পূর্ণভাবে অক্ষম, যেমন দুই হাত বা পা হারানো, দৃষ্টিহীন বা মানসিকভাবে বিকৃত। ক্যাটেগরি ‘বি’: দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা পাওয়া যাবে, যেমন এক হাত বা পা হারানো, আংশিক দৃষ্টিহীনতা, বা মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাত। ক্যাটেগরি ‘সি’: সুস্থ হতে চিকিৎসা প্রয়োজন এমন আহতরা। ক্যাটেগরি ‘ডি’: সাধারণ আহতরা, যারা সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে সক্ষম।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইশরাত চৌধুরী জানান, জনবল কাঠামো ইতিমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদন পেলে আগামী মাসে অধিদপ্তরের কার্যক্রম শুরু হবে। তবে, স্থান নির্ধারণের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আলোচনা চলছে।
নীতিমালায় শহীদ এবং আহতদের পুনর্বাসন, চিকিৎসা সুবিধা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। শহীদ পরিবারকে এককালীন/মাসিক অনুদান প্রদান এবং আহতদের চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যয় সরকারের আওতায় আনা হবে।
একদিকে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) অধিদপ্তর না হওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তারা দাবী করছেন, জামুকাকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে অধিদপ্তর করা প্রয়োজন। তবে, বর্তমান সরকারের আলোচনায় এই বিষয়টি নেই।
গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠনের প্রক্রিয়া চলমান, এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত নীতিমালাটি শিগগিরই গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে। সরকারের বিভিন্ন স্তরের অনুমোদনের পর অধিদপ্তরের কার্যক্রম শুরু হবে, এবং শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য প্রাপ্য সহায়তা দেওয়া হবে।
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের সহায়তা প্রদানকারী এই নতুন উদ্যোগ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। রাষ্ট্রের উদ্যোগে শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসনের এই প্রক্রিয়া তাদের আত্মত্যাগের প্রতি রাষ্ট্রের কর্তব্য ও দায়বদ্ধতার প্রতিফলন।