মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকালে যশোরে বৃহত্তর যশোর জেলা রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটি এক বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করে, যা রূপসী বাংলা এক্সপ্রেসের উদ্বোধন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। যশোরবাসী, যাদের দীর্ঘদিন ধরে রেল যোগাযোগের উন্নতির জন্য দাবি ছিল, তারা একমাত্র একটি ট্রেন চালু করা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং একই সাথে কালো পতাকা প্রদর্শন করেন।
পদ্মাসেতু লিংক প্রকল্পের আওতায় যশোর থেকে ঢাকাগামী রূপসী বাংলা এক্সপ্রেসের উদ্বোধন হয়। এর অংশ হিসেবে যশোর রেলওয়ে জংশনে বিকাল ৩টা ৩০ মিনিট থেকে এক বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়, যেখানে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা কালো পতাকা প্রদর্শন করেন। সন্ধ্যায় রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস ঢাকাগামী ট্রেনটি যশোর স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়ার সময় ট্রেনের ইঞ্জিনে কালো পতাকা বেঁধে দেওয়া হয়।
এদিনের বিক্ষোভের মূল কারণ হলো—ঢাকা-বেনাপোল রুটে মাত্র একটি ট্রেন চালু করা, যা যশোর এবং খুলনার বাসিন্দাদের ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। যশোরবাসী এতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি, কারণ দীর্ঘদিন ধরে তারা রেলের উন্নতি এবং অধিক ট্রেন চলাচলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
বৃহত্তর যশোর জেলা রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটি তাদের পূর্বঘোষিত ছয় দফা দাবির বাস্তবায়ন দাবি করেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, যশোর-ঢাকা-পদ্মাসেতু লিংক প্রজেক্টে বেনাপোল-যশোর-নড়াইল-ঢাকা রুটে ২টি ট্রেন চালু করা। দর্শনা-যশোর-নড়াইল-ঢাকা রুটে ২টি ট্রেন চালু করা। যশোর থেকে ঢাকায় অফিস করার জন্য ট্রেনের নির্দিষ্ট সময়সূচী তৈরি করা। আন্তঃনগর ট্রেনে সুলভ বগী যুক্ত করা, ট্রেনের ভাড়া বাস ভাড়া থেকে কম রাখা, সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বৃহত্তর যশোর জেলা রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক কাওসার আলী, সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার রুহুল আমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান ভিটু এবং বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, “যশোরবাসী এই প্রকল্পের উদ্বোধনে আনন্দিত হতে পারছে না। একমাত্র একটি ট্রেন এবং অনির্ধারিত সময়সূচী যশোরবাসীর মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে।” নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, “যদি সুনির্দিষ্টভাবে আমাদের দাবিগুলো পূরণ না করা হয়, তবে যশোরবাসী বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে, যার মধ্যে রেলপথ অবরোধ এবং রাজপথে বিক্ষোভও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।”
বিক্ষোভের অংশ হিসেবে, যশোরে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ রূপসী বাংলা এক্সপ্রেসের লোকোমাস্টারকে ফুল এবং কালো পতাকা প্রদান করেন। এরপর, ট্রেনের ইঞ্জিনে কালো পতাকা বেঁধে দেওয়া হয়, যা একটি প্রতীকী প্রতিবাদের চিহ্ন হিসেবে কার্যকর হয়। সন্ধ্যা ৫টা ৫০ মিনিটে ট্রেনটি যশোর জংশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ বলেন, এই প্রতীকী বিক্ষোভের পর, যদি তাদের ছয় দফা দাবি পূরণ না হয়, তবে তারা আরো বড় ধরনের আন্দোলনের পথে হাঁটতে প্রস্তুত। তাদের দাবি পূরণ না হলে আগামীতে রেলপথ অবরোধ এবং রাজপথে বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হবে।
এই বিক্ষোভ কর্মসূচি এবং দাবির সাথে সাথে, বৃহত্তর যশোর জেলা রেল যোগাযোগ উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটি তাদের এলাকায় রেলের উন্নয়ন এবং যাত্রীদের সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।