রাজশাহী জেলার চারঘাট উপজেলার সারদা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত আট উপপরিদর্শক (এসআই) অব্যাহতি পেয়েছেন। আজ বুধবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ তাঁদের হাতে অব্যাহতি পত্র তুলে দেওয়া হয় এবং রাত নয়টার মধ্যে তাঁদের একাডেমি ত্যাগ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এই ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত কর্মকর্তাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা ও অশৃঙ্খলার জন্য একটি বড় ধরনের পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সারদা পুলিশ একাডেমির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যখন গত রোববার সন্ধ্যায় তাঁরা প্রশিক্ষণের মাঠে নির্দেশনা না মেনে উচ্চ স্বরে হইচই করেন। এই ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছিল, যেখানে তাঁদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছিল। ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হওয়া সাপেক্ষে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন একাডেমির পুলিশ সুপার (বেসিক ট্রেনিং-২) মো. তানভীর সালেহীন। তিনি অব্যাহতি পত্রে স্বাক্ষর করেন এবং জানানো হয় যে অব্যাহতির পর তাঁদের একাডেমি থেকে রাত নয়টার মধ্যে বের হয়ে যেতে হবে। যদিও এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এসআইদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি, তবে দুইজন এসআই প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এই ৮ এসআইকে অব্যাহতি দেওয়া গেলেও, সারদা পুলিশ একাডেমির ৪০তম ক্যাডেট এসআই ব্যাচের অন্তর্গত মোট ৮২৩ জন প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে এর আগে তিন ধাপে ৩১৩ জন এসআইকে মাঠে ও ক্লাসে বিশৃঙ্খলার অভিযোগ তুলে শোকজ করা হয়েছিল। সেসময় ২৫২ জনকে ২১ অক্টোবর, ৫৮ জনকে ৪ নভেম্বর এবং ১৮ নভেম্বর ৩ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। এবার চতুর্থ ধাপে আরও আটজনকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
অব্যাহতি পাওয়া এক এসআই জানিয়েছেন যে, তাঁরা সন্ধ্যা সাড়ে আটটার দিকে অব্যাহতি পত্র হাতে পেয়েছেন এবং একাডেমি থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য ব্যাগ গোছাচ্ছেন। তিনি জানান, একাডেমির কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁদের দেওয়া জিনিসপত্রও ফেরত দিয়েছেন।
এর আগেও ২০২৩ সালের ২০ অক্টোবর, ৪০তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ৬২ জন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) যখন তাঁদের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষ করতে যাচ্ছিলেন, তখন সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছিল। প্রথমে ২০ অক্টোবর এবং পরে ২৪ নভেম্বর অনুষ্ঠানের তারিখও পরিবর্তিত হয়, যা সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য একটি বড় ধরনের অস্বস্তির সৃষ্টি করে।
সারদা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত এসআইদের মধ্যে এই বিশৃঙ্খলার ঘটনা পুলিশের শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে যেখানে পুলিশের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের গতি এবং অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে অশৃঙ্খল আচরণ এবং উচ্চস্বরে হইচই করার মতো ঘটনাগুলি প্রতিষ্ঠানটির জন্য হতাশাজনক। এসব ঘটনায় পুলিশের শৃঙ্খলা এবং কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, যা সাধারণ মানুষের আস্থাকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে।
তবে, একাডেমির কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ এই বিশৃঙ্খলা দূর করতে এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রাজশাহী সারদা পুলিশ একাডেমিতে এসআইদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে অব্যাহতির ঘটনা এক নতুন আলোচনার সৃষ্টি করেছে। পুলিশের শৃঙ্খলা রক্ষা এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মান উন্নয়ন জরুরি হয়ে পড়েছে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যায় এবং পুলিশ বাহিনী আরও শক্তিশালী এবং দক্ষ হয়ে ওঠে।