প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মনোভাব ইউক্রেনে পরীক্ষামূলক আরও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাবেন বলে জানিয়েছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম এসব ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে “আন্তর্জাতিক অপরাধ” বলে বর্ণনা করেছেন।
শুক্রবার পুতিন এক প্রতিরক্ষা সম্মেলনে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, রাশিয়ার কাছে উউল্লেখযোগ্য সংখ্যক উচ্চগতির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। রাশিয়া অব্যাহতভাবে ইউক্রেনে এগুলোর পরীক্ষা চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন, দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন।
গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে নতুন আরো একটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের দিনিপ্রো শহরে প্রথমবারের মতো ‘ওরেশনিক’ নামের ওই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত হানে। নতুন এ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পর পর পুতিন একে সফল পরীক্ষা হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা অব্যাহত রাখার ঘোষণাও দেন।
আবার, নতুন ঝুঁকি মোকাবিলায় কিয়েভ পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে এক সাথে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ইউক্রেনের ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সরবরাহ করা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডে ইউক্রেনের হামলা চালানোর জবাবেই হাইপারসনিক ওই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে।
তার আগে বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তাঁর প্রশাসন রাশিয়ায় হামলায় ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দেয়। এতে করে ওয়াশিংটন ও কিয়েভের সঙ্গে মস্কোর উত্তেজনা অনেক বেড়ে গেছে।শুক্রবার পুতিন বলেন যে, রাশিয়া প্রয়োজনে যুদ্ধক্ষেত্রেও এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করবে। বিশেষ করে যদি রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি হয় তাহলে।
ওরেশনিক হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র শব্দের চেয়ে ১০ গুণ বেশি গতিতে উড়ে যেতে পারে এবং তিনি এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে দিয়েছেন। নতুন মাঝারি পাল্লার এ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম। বিষয়টি জনসমক্ষে আগে কখনও প্রকাশ করা হয়নি।
পেন্টাগন বলেছে, ‘আরএস-২৬ রুবেজ’ নামে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের (আইসিবিএম) ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে এই ওরেশনিক। হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো শব্দের চেয়ে অন্তত পাঁচ গুণ গতিতে ছুটতে পারে। আবার পথিমধ্যে কৌশল বদলাতে পারে।
এ কারণে এগুলো শনাক্ত করা ও আটকে দেওয়া অনেক কঠিন। রিস্ক অ্যাডভাইজরি কোম্পানি সিবিলাইনের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জাস্টিন ক্রাম্প বিবিসিকে বলেন যে, মস্কো সতর্কতা হিসেবে ওই হামলা করে থাকতে পারেন। জাস্টিন ক্রাম্পের মতে, যে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে তা এত দ্রুতগামী ও আধুনিক যা ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষাকে মারাত্মকভাবে চ্যালেঞ্জ করতে পারেবে। নতুন এই ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষায় পুতিন উচ্ছ্বসিত হলেও এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে ইউক্রেন ও মিত্ররা। জেলেনস্কি আরো বলেন, অন্য দেশকে সন্ত্রাসের জন্য ব্যবহার করে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানো স্পষ্টতই একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ।
এই ঘটনায় পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো ইউক্রেনের সঙ্গে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন।রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলতি সপ্তাহের এই উত্তেজনাকর অবস্থা নিয়ে সতর্ক করেছেন বিশ্বনেতাদের অনেকেই। পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক বলেন, যুদ্ধ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং এতে বৈশ্বিক দ্বন্দ্বের সত্যিকার ঝুঁকি বেড়ে গেছে। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান বলেন, পশ্চিমাদের উচিত ভ্লাদিমির পুতিনের সতর্কতাকে গুরুত্ব দেওয়া। যার কারণ, রাশিয়া সামরিক শক্তির ওপর নির্ভর করেই নীতি ঠিক করে।
আর উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি বলে উল্লেখ করে যাচ্ছেন। তাই সামনের দিনগুলোতে অনেক কিছু ঘটনা ঘটার আশংকা আছে।