রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একটি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। আজ সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান জনস্বার্থে এই রিটটি করেন।
রিটটি বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে আগামী সপ্তাহে শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী ইশরাত হাসান।
সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের দেওয়া দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করার ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু এই ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা বা গাইডলাইন নেই। রিটকারী আইনজীবীর মতে, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা অতীতে বেশ কিছু ক্ষেত্রে অপব্যবহার হয়েছে। বিশেষত, রাজনৈতিক বিবেচনায় হত্যা মামলার আসামিদের ক্ষমা করার অভিযোগ রয়েছে।
ইশরাত হাসান উল্লেখ করেন, ক্ষমা প্রদর্শনের এই ক্ষমতার অপব্যবহার সংবিধানের ৭, ২৭, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তিনি বলেন, “কোনো নীতিমালা ছাড়া রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা প্রয়োগ করা হলে তা স্বচ্ছতার অভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। এ কারণে নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি।”
রিটের আবেদনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে, সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে বর্ণিত ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে নীতিমালা না থাকা সংবিধানের অন্যান্য অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হিসেবে কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করার আবেদন। রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা বা গাইডলাইন প্রণয়ন কেন করা হবে না, সে বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে।
রিটে ছয়জনকে বিবাদী করা হয়েছে। তারা হলেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব।
আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, “রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ। তবে কোনো নীতিমালা না থাকায় এর প্রয়োগ স্বচ্ছতার অভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এটি শুধু সংবিধানের মূল নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়, বরং এটি ন্যায়বিচারের ধারণারও পরিপন্থী। তাই এই ক্ষমতা প্রয়োগে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা প্রয়োজন।”
রিটে উল্লেখ করা হয়েছে যে, অতীতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের মাধ্যমে বেশ কয়েকজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মুক্তি পেয়েছেন। এর বেশিরভাগই ছিল হত্যা মামলার আসামি, যা অনেক ক্ষেত্রে বিতর্কিত হয়েছে।
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নীতিমালা প্রণীত হলে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা আরো স্বচ্ছ ও ন্যায়সঙ্গত হবে। এটি বিচারব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা বাড়াবে এবং রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখবে।
রিটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতার প্রয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নীতিমালা প্রণয়নের দাবি সামনে এসেছে। এখন হাইকোর্ট কী ধরনের নির্দেশনা দেন, তা নিয়ে নজর থাকবে সংশ্লিষ্ট মহলের।