ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের প্রমাণ পেয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। লন্ডনের প্রতিনিধির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সংস্থাটি।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের সিনিয়র ট্রায়াল অ্যাটর্নি লিন্ডা স্যামুয়েলস এবং স্পেশাল এজেন্ট লা প্রিভোট তদন্তে দেখতে পান, বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন শেল কোম্পানির মাধ্যমে নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, এবং লন্ডনের ব্যাংকগুলোতে বিপুল পরিমাণ অর্থ স্থানান্তরিত হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনা এবং জয়ের আর্থিক লেনদেনে কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ ও হংকংয়ে নিবন্ধিত শেল কোম্পানি ব্যবহৃত হয়। এসব অ্যাকাউন্টে ৩০০ মিলিয়ন ডলার জমা হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে এফবিআই।
গত ৯ সেপ্টেম্বর এফবিআই-এর একটি প্রতিনিধি দল দুদকের সঙ্গে বৈঠক করে। ওই বৈঠকে অর্থপাচারের বিপুল পরিমাণ প্রমাণ বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
গত ১ অক্টোবর ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল দুদকের তৎকালীন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করে পাচার হওয়া তহবিলের প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা করেন।
দুদকের অনুসন্ধানে শেখ হাসিনা, জয়, শেখ রেহানা, এবং ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে ৯টি উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মের মাধ্যমে ৭০০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে।
২০২৩ সালের ৫ আগস্ট শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে এক গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানা ভারতে পালিয়ে যান। ১৫ বছর ধরে শাসনের পর তিনি দুর্নীতির বিস্তৃত অভিযোগে অভিযুক্ত হচ্ছেন।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বাংলাদেশ বার্ষিক গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার অর্থ হারিয়েছে। এফবিআই এবং দুদকের অনুসন্ধানে শেখ হাসিনা ও জয়ের আর্থিক অনিয়ম আরও প্রকাশিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের জানান, “আমরা আরও সুনির্দিষ্ট তথ্য পেতে পারি এবং ভবিষ্যতে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাব।”
এই ঘটনার ফলে বাংলাদেশে উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়টি আরও গভীরভাবে আলোচনায় এসেছে। দেশের জনগণের স্বার্থে এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য জোর দাবি উঠেছে।