1. [email protected] : Hossain Monir : Hossain Monir
  2. [email protected] : RT BD NEWS : RT BD NEWS
  3. [email protected] : RT BD NEWS :
সমুদ্রের যাযাবরদের ”বাজাউ“ জীবনযাত্রা এবং অদ্ভুত ক্ষমতা - RT BD NEWS
শনিবার, ০৩ মে ২০২৫, ১০:০১ অপরাহ্ন

সমুদ্রের যাযাবরদের ”বাজাউ“ জীবনযাত্রা এবং অদ্ভুত ক্ষমতা

আরটি বিডিনিউজ অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত: সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪
সমুদ্রের যাযাবরদের ”বাজাউ“ জীবনযাত্রা এবং অদ্ভুত ক্ষমতা

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নানা অঞ্চলে বিচিত্র এক সম্প্রদায় বাস করে, যারা প্রকৃতপক্ষে সমুদ্রের ওপর নির্ভরশীল এবং তাদের জীবন সমুদ্রে হারিয়ে গেছে। এই সম্প্রদায়টির নাম বাজাউ। তারা ‘সমুদ্রের যাযাবর’ বা ‘Sea Nomads’ নামে পরিচিত। তাদের জীবনযাত্রা, মাছ ধরার কৌশল এবং শ্বাসধারণ ক্ষমতার কারণে তারা বিশ্বের নজর কাড়ে। সারা বিশ্বে তারা সমুদ্রের রাজা হিসেবে পরিচিত এবং একমাত্র জনগোষ্ঠী যারা বছরের বেশিরভাগ সময় সমুদ্রের উপর ভাসমান নৌকায় বসবাস করে। বাজাউদের এই অদ্ভুত জীবনযাত্রা এবং শারীরিক বৈশিষ্ট্যগুলো তাদেরকে সাধারণ মানুষের থেকে আলাদা করে তোলে।

বাজাউরা সাধারণত ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে বাস করে। তাদের জীবন সমুদ্রের উপর ভিত্তি করে এবং তারা মাছ ধরার পদ্ধতির জন্য বিশ্বসেরা। বেশিরভাগ বাজাউ পরিবার গ্রীষ্মকালে সাগরের ধারে ভাসমান নৌকায় বসবাস করে, আর শীতকালে সমুদ্রের গভীরে গিয়ে মাছ ধরতে বের হয়।

বাজাউরা বহু বছর ধরে সমুদ্রের মধ্যে অবস্থান করে এবং তাদের জীবনযাত্রায় স্থলভাগের কোনো প্রভাব নেই। কিছু বাজাউ জীবনে কখনো মাটির ওপর পা রাখেনি, তারা পুরোপুরি নৌকায় কাটায়। এরা নিজেদের জীবনধারা এবং পরিবেশের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছে এবং অনেক সময় তারা এক প্রজন্মের পর এক প্রজন্ম সমুদ্রে বাস করে।

বাজাউদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তাদের মাছ ধরার কৌশল। তারা ফ্রীডাইভিং নামক এক বিশেষ কৌশল ব্যবহার করে, যেখানে তারা পানির নিচে শ্বাস বন্ধ রেখে মাছ ধরতে সক্ষম। এই কৌশল তাদের দীর্ঘকালীন অভ্যাস এবং শারীরিক অভিযোজনের ফলস্বরূপ তৈরি হয়েছে।

বাজাউরা প্রায় ৭০ মিটার (২৩১ ফুট) গভীরে ডুব দিয়ে মাছ ধরতে পারে। তাদের শ্বাসধারণ ক্ষমতা অত্যন্ত উন্নত, এবং তারা সাধারণত ১৫ মিনিট পর্যন্ত শ্বাস ধরে রাখতে সক্ষম। এই অভ্যাস আধুনিক বিজ্ঞানের কাছে এক বিস্ময়। কারণ বিজ্ঞান বলে, অক্সিজেনের অভাবে ৫-৬ মিনিটের বেশি শ্বাস বন্ধ থাকলে মানুষের মস্তিষ্ক কার্যক্ষমতা হারাতে পারে, তবে বাজাউদের ক্ষেত্রে এটি সঠিক নয়।

বাজাউদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য অনেকটাই আলাদা। তাদের প্লীহা (spleen) আমাদের থেকে অনেক বড়, যা তাদের দীর্ঘ সময় শ্বাস ধরে রাখার ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, তাদের প্লীহার বড় আকার এবং মাংসপেশির শক্তি তাদেরকে পানির নিচে অনেক সময় ধরে অবস্থান করতে সাহায্য করে। এরা পানির নিচে থাকাকালীন অক্সিজেন শোষণের জন্য আরও কার্যকরী পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারে।

এছাড়াও, বাজাউদের শারীরিক কাঠামো সাগরের ধকল এবং তাদের জীবনযাত্রার সাথে মানানসই হয়ে উঠেছে। তাদের শরীরের পেশীগুলো অধিক শক্তিশালী, যা সমুদ্রের প্রচণ্ড স্রোতের মধ্যে স্থির থাকতে সাহায্য করে।

বাজাউদের সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা, এবং ঐতিহ্য পুরোপুরি সমুদ্রের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাদের খাবারের প্রধান উৎস সমুদ্র থেকে পাওয়া মাছ, শৈবাল, এবং অন্যান্য সামুদ্রিক জীব। বাজাউরা নিজেদের জন্য গঠন করে সোনালী উপকূলে গা ভাসানো ভাসমান নৌকা। তারা সেখানে নিজেদের বসবাস তৈরি করে, মাছ ধরার এবং অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য সমুদ্রেই নির্ভরশীল। তাদের পরিবারবদ্ধ জীবন ব্যবস্থা, নৌকায় থাকার পদ্ধতি এবং সমুদ্রে চূড়ান্ত দক্ষতা তাদের একটি আলাদা সমাজব্যবস্থা তৈরি করেছে।

বাজাউদের শ্বাসধারণ ক্ষমতা এবং তাদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা চলছে। গবেষকরা তাদের বিশেষ শ্বাসধারণ ক্ষমতা এবং শারীরিক অভিযোজনের পেছনের রহস্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। বাজাউদের যে প্লীহা অনেক বড়, যা সাধারণ মানুষের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি, এটি তাদের দীর্ঘ সময় শ্বাস আটকে থাকার জন্য সহায়ক। বিজ্ঞানীরা এই বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছেন এবং একে এক ধরনের শারীরিক অভিযোজন হিসেবে চিহ্নিত করছেন।

আজকের দিনে, বাজাউদের ঐতিহ্য এবং জীবনযাত্রা নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সমুদ্রের অবস্থা পরিবর্তন, মাছের অভাব এবং সরকারের নানা নিয়ম-কানুন তাদের জীবনযাত্রাকে সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি, সামাজিক ও পরিবেশগত পরিবর্তন বাজাউদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

এছাড়া, সমুদ্রের উন্নয়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তন তাদের জীবিকার উপকরণকে সংকটের মধ্যে ফেলেছে। মাছের অভাব, সমুদ্রের দূষণ এবং ক্ষুদ্র পরিবেশগত পরিবর্তন বাজাউদের জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করছে। তাই তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক উদ্বেগ রয়েছে।

বাজাউ জনগণ সমুদ্রের যাযাবর হিসেবে বিশ্বে পরিচিত, এবং তাদের জীবনযাত্রা একটি বিশাল সাংস্কৃতিক সম্পদ। তারা একটি অভ্যস্ত, সুদীর্ঘ ঐতিহ্যের ধারক, যার মধ্যে সমুদ্রের প্রতি তাদের অদ্ভুত এবং গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশিত হয়। তবে, আধুনিক পৃথিবী তাদের ঐতিহ্যকে সংকটের মুখে ফেলছে, আর তাদের শ্বাসধারণ ক্ষমতার মতো বিশেষ দক্ষতা নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

বাজাউরা সমুদ্রের রাজা, এবং তাদের কাহিনী পৃথিবীকে দেখায় কীভাবে একটি জনগণ সমুদ্রের সঙ্গে একাত্ম হয়ে বেঁচে থাকতে পারে, নিজেদের ঐতিহ্য রক্ষা করে এবং প্রকৃতির শক্তিকে জয় করতে পারে।

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 𝑹𝑻 𝑩𝑫 𝑵𝑬𝑾𝑺 আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট