সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের নাটকীয় অভিযানের মুখে বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন ঘটে। এর ফলে দেশটির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। এই সুযোগে প্রতিবেশী দেশ ইসরায়েল সিরিয়ার ভেতরে লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। গত রোববার বাশার আল-আসাদ নাটকীয়ভাবে রাশিয়ায় চলে যাওয়ার পর থেকে ইসরায়েল সিরিয়ায় চার শতাধিক হামলা চালিয়েছে। এসব হামলার পেছনে ইসরায়েল বিভিন্ন কারণ দেখালেও এর আসল উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ইসরায়েল শুধু হামলাই চালাচ্ছে না, বরং জাতিসংঘের আপত্তি উপেক্ষা করে বাফার জোন পেরিয়ে সিরিয়ার ভেতরে প্রবেশ করেছে। ১৯৭৪ সালে সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী গোলান মালভূমিতে একটি বাফার জোন তৈরি করা হয়েছিল। তবে বাশার সরকারের পতনের পর ইসরায়েল এই বাফার জোনের ৪০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখলে নিয়েছে।
গোলান মালভূমির দুই-তৃতীয়াংশই ইতিমধ্যে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এখন তারা বাফার জোনের ভেতর দিয়ে সিরিয়ার ভূখণ্ডে ১০ কিলোমিটার ভেতরে কাতানা এলাকায় পৌঁছেছে। এ এলাকাটি রাজধানী দামেস্কের খুব কাছাকাছি। তবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এমন অনুপ্রবেশের কথা অস্বীকার করেছে।
ইসরায়েলের দাবি, সিরিয়ায় ইরানের সামরিক লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। ইসরায়েল বলছে, সিরিয়ার অস্ত্রাগার ও সামরিক স্থাপনা চরমপন্থীদের হাতে পড়তে পারে। তবে ইরান এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং জানিয়েছে, সিরিয়ায় তাদের কোনো সামরিক উপস্থিতি নেই।
বাশার সরকারের পতনের পর ইসরায়েল দামেস্ক, আল-মায়াদিন, তারতাস, মাসায়াফ, কাসার ক্রসিং এবং খালখালা সামরিক বিমানবন্দরে হামলা চালিয়েছে। এতে সিরিয়ার সামরিক স্থাপনা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, ১৯৭৪ সালের চুক্তি অনুযায়ী নিরস্ত্রীকরণ অঞ্চল হিসেবে থাকা এলাকাগুলো চিরদিনের জন্য ইসরায়েলের অংশ হয়ে থাকবে। এদিকে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেন সার বলেছেন, রাসায়নিক অস্ত্র এবং দূরপাল্লার রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ধ্বংস করাই তাদের লক্ষ্য।
ইসরায়েলের ন্যাশনাল ইউনিটি পার্টির নেতা বেনি গান্টজ বলেছেন, সিরিয়ায় হামলা ইসরায়েলের জন্য একটি “ঐতিহাসিক সুযোগ”। তিনি দ্রুজ ও কুর্দি গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নেরও আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সাবেক সদস্য ও এক গবেষক বলেছেন, সিরিয়া ভবিষ্যতে ছোট ছোট অঞ্চলে বিভক্ত হয়ে যেতে পারে। প্রতিটি অঞ্চল ইসরায়েলসহ বিভিন্ন বিদেশি শক্তির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারে।
ইসরায়েলের হামলার বাস্তব কারণ সম্পর্কে এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এটি স্পষ্ট যে, তারা সিরিয়ার ভূখণ্ড দখল ও আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে চায়।
সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যে এক নতুন সংকট সৃষ্টি করেছে। একদিকে ইসরায়েলের লাগাতার হামলা, অন্যদিকে সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিভাজন এবং বিদেশি শক্তির প্রভাব দেশটিকে অস্থিতিশীলতার নতুন স্তরে নিয়ে গেছে। সিরিয়ার ভবিষ্যৎ এখন আরও অনিশ্চিত।