বর্তমান যুগে সাংবাদিকতা শুধুমাত্র তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে নয়, বরং সমাজের নৈতিকতা ও সরকারের কার্যক্রমের প্রতিফলন হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে মুন্সিগঞ্জের মতো উন্নয়নশীল অঞ্চলে সাংবাদিকতার চিত্র এখন অনেকটাই ভিন্ন। সঠিক সাংবাদিকতার একাডেমিক বা নৈতিক মূল্যবোধের চেয়ে কিছু অশুভ শক্তি এবং দুর্নীতির প্রকাশ ঘটে স্থানীয় সাংবাদিকদের মাঝে। এর ফলস্বরূপ, সমাজের মধ্যে বিভ্রান্তি ও নৈতিক অবক্ষয় দেখা যাচ্ছে।
মুন্সিগঞ্জের সিটিতে একদিকে যেমন সাংবাদিকদের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি অপরদিকে সাংবাদিকদের পেশাগত মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে। মুন্সিগঞ্জের স্থানীয় বাজারে অনেকেই দাবি করছেন, সাংবাদিক নামক ‘পণ্য’ এখন সবচেয়ে কম দামে পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু এদের মধ্যে সৃজনশীলতা ও নৈতিকতার অভাব দেখা যাচ্ছে। একে অপরকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নয়, বরং শত্রু হিসেবে দেখে কিছু সাংবাদিকের মধ্যে প্রতিযোগিতা হচ্ছে তাদের কাজের দক্ষতা নিয়ে নয়, বরং চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত হয়ে।
মুন্সিগঞ্জের স্থানীয় জনগণের মধ্যে রয়েছে গভীর হতাশা। এই এলাকার মানুষজন সাধারণত সেবা নিতে গিয়ে অপমানিত হন এবং অসাধু ব্যক্তিরা সরকারি সেবা খাতে দুর্নীতি করে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করছেন। পাসপোর্ট অফিস, ভূমি অফিস, হাসপাতালসহ বিভিন্ন সেবা খাতে ভোগান্তি ও দুর্নীতির ছড়াছড়ি রয়েছে, যা একদিকে জনসাধারণের জন্য বিপদজ্জনক, অন্যদিকে সরকারের সুনামকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
এতে মুনশিগঞ্জের সাধারণ মানুষকে আরও দুর্বল করে তোলে, যারা প্রায়ই শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে শিকার হন। এখানে এমন অনেক সাংবাদিক রয়েছেন যারা এই অসাধু ব্যবসায়ীর পক্ষ নিয়ে কাজ করছেন, যা এলাকার জনসাধারণের জন্য বড় একটি সমস্যা সৃষ্টি করেছে।
মুন্সিগঞ্জের পাড়া মহল্লা অনেক জায়গাতেই অপরিছন্ন এবং জনস্বাস্থ্য বিপদজ্জনক পর্যায়ে চলে গেছে। এছাড়াও সড়ক, পরিবহন ব্যবস্থা এবং পর্যাপ্ত সেবা বা উন্নয়নের অভাব রয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে যদিও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, ছাত্রছাত্রী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং স্থানীয় জনগণ একযোগে কাজ করার চেষ্টা করছেন, কিন্তু সঠিক নেতৃত্ব ও দায়িত্ববোধের অভাবের কারণে সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে সাংবাদিকতা যে শুধু তথ্য পরিবেশনই নয়, বরং গণমাধ্যমের মাধ্যমেই সমাজের সমস্ত দুর্নীতি, অপরাধ ও অব্যবস্থাপনা তুলে ধরা উচিত—এ কথা মনে করেন অভিজ্ঞ মহল। তবে বর্তমানে মুন্সিগঞ্জে যে সাংবাদিকদের সংখ্যা বেড়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেই তার দায়িত্ব ও পেশাগত শিষ্টাচার ভুলে অপ-সাংবাদিকতার দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে। এর ফলে অনেক সৎ সাংবাদিকরা অসহায় হয়ে পড়ছেন এবং তাদের কাজের মান এবং বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যাচ্ছে।
অন্যদিকে, মুন্সিগঞ্জের স্থানীয় সাংবাদিকরা একত্রিত হয়ে এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারেন বলে মনে করছেন সাংবাদিক সংগঠনগুলো। সাংবাদিক নামক আত্মসম্মান বাঁচাতে এবং সৎ সাংবাদিকদের সম্মান সৃষ্টির জন্য মুন্সিগঞ্জ প্রেসক্লাব, বাংলাদেশ ফেডারেল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্ট (বিএফইউজে)সহ অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
দৈনিক নয়া দিগন্ত এর মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি, সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুস সালাম বলেন, “দেশ আজ অপ-সাংবাদিকতার শিকার। আমাদের সমাজের পরিবর্তন চাইলে সাংবাদিকতা থেকে শুরু করতে হবে।” এদিকে দৈনিক সংবাদ এর মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি, মাহবুব আলম লিটন মনে করেন, “মুন্সিগঞ্জে মেধাবী ও সৎ সাংবাদিকদের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন, যা পুরো সমাজকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করতে সাহায্য করবে।”
সমাজে গণমাধ্যমের ভূমিকা একান্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও মুন্সিগঞ্জের বর্তমান পরিস্থিতি যে শঙ্কাজনক, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সৎ ও স্বচ্ছ সাংবাদিকদের একত্রিত হয়ে, দুর্নীতি ও অপরাধের বিরুদ্ধে গঠনমূলক চিন্তা-ভাবনা এবং কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এটি শুধু মুন্সিগঞ্জে নয়, পুরো দেশের গণমাধ্যম ব্যবস্থার জন্য একটি বড় বার্তা হতে পারে।