ঢাকায় সম্প্রতি জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। গত তিন মাসে রাজধানীতে অন্তত আটজনের শরীরে এ ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)। ২০২৩ সালেও পাঁচজন জিকা রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন। চিকিৎসার পর তারা বর্তমানে ঝুঁকিমুক্ত।
জিকা ভাইরাস প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে শনাক্ত হয় ২০১৪ সালে। চট্টগ্রামের এক রোগীর সংরক্ষিত রক্তের নমুনা পরীক্ষায় এই রোগটি চিহ্নিত করা হয়। ২০১৭ সালে আইইডিসিআর একটি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানায়।
আইসিডিডিআরবি গত বছর পাঁচজন জিকা রোগী শনাক্ত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানিয়েছিল। কিন্তু সে সময় কোনো বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বর্তমান বছরেও আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়ির মশার নমুনায় জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন জানিয়েছেন, আক্রান্ত ব্যক্তিরা ধানমন্ডি, শ্যামলী এবং বনানী এলাকার বাসিন্দা। গত আড়াই মাসে আইসিডিডিআরবি অন্তত চারজনের রক্তের নমুনায় জিকা ভাইরাস শনাক্ত করেছে। তারা প্রতিষ্ঠানটির এক কিলোমিটারের মধ্যে বসবাস করেন। ঢাকার বাইরে এ রোগের অবস্থা সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই।
আইইডিসিআরের তথ্য অনুযায়ী, ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে জিকা ভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। বাকি ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে সাধারণত র্যাশ, মাথাব্যথা, চোখ লাল হওয়া, মাংসপেশি ও গিঁটে ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা না থাকায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা নিতে হয়। বিশ্রাম, প্রচুর পানি ও তরল গ্রহণ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। রোগীর অবস্থার অবনতি হলে নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জিকা ছাড়াও বর্তমানে ঢাকা শহরে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গতকাল একদিনেই প্রায় ১,০০০ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকার বাইরের ডেঙ্গুর তথ্য পাওয়া গেলেও জিকা ও চিকুনগুনিয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য নেই।
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কাজী তারিকুল ইসলাম বলেন, “জিকা শনাক্ত হওয়া বড় ধরনের সতর্ক সংকেত। রোগটি প্রতিরোধে এবং চিকিৎসায় নতুন করে ভাবতে হবে।”
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে।
গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে জিকা ভাইরাস মারাত্মক হতে পারে। এটি ‘মাইক্রোসেফালি’ নামক জন্মগত সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়, যার ফলে শিশুর মস্তিষ্ক স্বাভাবিক আকারে বৃদ্ধি পায় না। বয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি গুলেনবারি সিনড্রোম (জিবিএস) সৃষ্টি করতে পারে, যা চলনশক্তি হ্রাসের কারণ হতে পারে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, জিকা ভাইরাসের দুটি ধরন রয়েছে—আফ্রিকান ও এশিয়ান। ঢাকার রোগীদের নমুনায় এশিয়ান ধরন শনাক্ত হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ এবং জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। রোগের প্রকোপ বাড়ার আগেই সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।