বিশ্বজুড়ে বড়দিন উদযাপনের প্রতীক সান্তা ক্লজের আদি রূপ সেন্ট নিকোলাস অব মায়রার মুখমণ্ডল পুনর্গঠন করেছেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় ১,৭০০ বছর পর তার খুলির কাঠামো ব্যবহার করে এই মুখমণ্ডলের ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরি করেছেন ফেসিয়াল রিকনস্ট্রাকশন বিশেষজ্ঞ সিসেরো মোরাইস।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুসালেম পোস্ট জানিয়েছে, ১৯৫০-এর দশকে লুইগি মার্টিনোর সংগৃহীত ডেটা এবং নিকোলিয়ান স্টাডি সেন্টারের অনুমতি নিয়ে এই পুনর্গঠনের কাজ করা হয়। প্রথমে থ্রিডি প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেন্ট নিকোলাসের খুলির গঠন পুনরায় তৈরি করা হয়। এরপর এনাটমিক্যাল ডিফরমেশন পদ্ধতির মাধ্যমে তার মুখমণ্ডলের বর্ণনা নির্ধারণ করা হয়।
সিসেরো মোরাইস জানান, পুনর্গঠনের ফলে দুটি ছবি তৈরি হয়েছে। একটি ধূসর রঙের বাস্তবসম্মত ছবি এবং অন্যটি আরও শিল্পসম্মত, যেখানে সেন্ট নিকোলাসের দাড়ি ও ঐতিহ্যবাহী পোশাক যুক্ত করা হয়েছে। আকর্ষণীয়ভাবে, এই ছবি ১৮২৩ সালে লেখা কবিতা “আ ভিজিট ফ্রম সেন্ট নিকোলাস”-এর বর্ণনার সঙ্গে মিলে যায়।
সেন্ট নিকোলাস ছিলেন চতুর্থ শতকের একজন গ্রিক খ্রিষ্টান বিশপ। আনুমানিক ২৭০ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান তুরস্কের পাতারা শহরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। দানশীলতা ও দয়ার জন্য তিনি বিখ্যাত ছিলেন। দরিদ্রদের সাহায্য করার অসংখ্য গল্প তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে।
বিশেষত, একটি জনপ্রিয় কাহিনিতে বলা হয়, সেন্ট নিকোলাস তিনজন দরিদ্র বালিকার বিয়ের জন্য তাদের বাবাকে গোপনে স্বর্ণমুদ্রা উপহার দেন। ৬ ডিসেম্বর, ৩৪৩ খ্রিষ্টাব্দে তার মৃত্যু হয় এবং এই দিনটি সেন্ট নিকোলাস দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে।
ইউরোপজুড়ে সেন্ট নিকোলাসের দানশীল চরিত্রটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং বিভিন্ন সংস্কৃতিতে রূপান্তরিত হয়। ডাচরা তাকে “সিন্টারক্লাস” নামে উল্লেখ করত, যা থেকে “সান্তা ক্লজ” নামটির উৎপত্তি।
১৮২৩ সালে ক্লেমেন্ট ক্লার্ক মুরের কবিতা “আ ভিজিট ফ্রম সেন্ট নিকোলাস” সান্তা ক্লজের আধুনিক চিত্রকে আরও জনপ্রিয় করে তোলে। কবিতাটিতে সান্তা ক্লজকে লাল পোশাক, লম্বা সাদা দাড়ি, হরিণ-টানা স্লেজ এবং শিশুদের জন্য উপহার নিয়ে আসার বর্ণনা করা হয়।
সেন্ট নিকোলাসের পুনর্গঠিত মুখমণ্ডল কেবল ঐতিহাসিক কৌতূহল মেটায়নি, বরং আমাদের প্রাচীন সংস্কৃতি ও দানশীলতার প্রতীককে নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করেছে। এটি সান্তা ক্লজের কল্পিত চরিত্রের মূল ভিত্তি হিসেবে সেন্ট নিকোলাসের ঐতিহাসিক অস্তিত্বকে আরও প্রমাণিত করেছে।
প্রযুক্তির সহায়তায় সেন্ট নিকোলাসের মুখমণ্ডলের পুনর্গঠন একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য। এটি শুধু ধর্মীয় ইতিহাস বা কল্পিত চরিত্র নয়, বরং মানবতার প্রতি তার দানশীলতার উদাহরণকেও নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরেছে।