1. [email protected] : Hossain Monir : Hossain Monir
  2. [email protected] : RT BD NEWS : RT BD NEWS
  3. [email protected] : RT BD NEWS :
রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:১৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
সারা দেশে টানা বৃষ্টি, বাড়ছে অতি ভারি বর্ষণের শঙ্কা রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ কালীগঞ্জে শতবর্ষী গাছ উপড়ে ভবনের উপর, আগুনে আহত ১ আগামীকাল জাতীয় নাগরিক পার্টির ‘নতুন বাংলাদেশের রূপরেখা’ ঘোষণা নেছারাবাদের শতবর্ষী পেয়ারা বাগানে নিষেধাজ্ঞা অমান্য: লাউডস্পিকার জব্দ দিনাজপুরের কাহারোলে নিষিদ্ধ ঘোষিত দুই ছাত্রলীগ কর্মী গ্রেফতার জামালপুরে যুবসমাজের প্রতিবাদ—শুভ পাঠানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি খুলনার দিঘলিয়ায় ভ্যানচালককে কুপিয়ে হত্যা, প্রাক্তন স্বামীর ওপর সন্দেহের তীর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে টেক্সওয়ার্ল্ড অ্যাপারেল মেলা ২০২৫-এ বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্ভাবনের প্রদর্শনী দেখাল ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯

শীতের হিমেল পরশে বাংলাদেশের দৃশ্যপট: আনন্দের সঙ্গে দায়িত্ববোধের প্রশ্ন

হোসেন মনির
  • প্রকাশিত: সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪
শীতের-সকালে-একজন-ছিন্নমুল-মানুষ

শীতের আগমনে বাংলাদেশের প্রকৃতিতে এক অনন্য পরিবর্তন ঘটে। ভোরের কুয়াশায় ঢাকা চারপাশ, পাকা রাস্তায় মিটমিটে আলোয় ঠান্ডায় জমাট বাধা সকাল, আর গ্রামে-শহরে খেজুরের রসের হাক—এসব মিলে শীত যেন এক অন্যরকম উৎসবের বার্তা নিয়ে আসে। তবে এই উৎসবের আবহে রয়েছে এক অদৃশ্য বিপরীত চিত্র, যা আমাদের হৃদয় ও বিবেককে বারবার নাড়া দেয়।

নতুন শীতের কাপড়ের ঘ্রাণ, পিঠা-পুলি তৈরির আয়োজন, খেজুরের রসের আস্বাদন, আর নানান জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার বায়না যেন শীতকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। ফরিদপুর থেকে পদ্মাসেতু হয়ে ভাঁড়ে করে খেজুরের রস বিক্রির দৃশ্য যেন গ্রামীণ ঐতিহ্যের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। ট্রেনের জানালা দিয়ে ভোরের সূর্যোদয় দেখতে দেখতে শীতের আনন্দ খুঁজতে তরুণ প্রজন্মের ঘাটে-বাটে ছুটে যাওয়া সেই উচ্ছ্বাসকে মনে করিয়ে দেয়।

শীতের সকালের পিঠার দোকানে মানুষের ভিড়, কিংবা রাস্তায় গরম চায়ের ধোঁয়া উড়তে থাকা চায়ের দোকানগুলো যেন সামাজিক মেলবন্ধনের এক চমৎকার মাধ্যম। ছোটরা দাদুবাড়ি-নানুবাড়ি যাবার বায়না ধরে, বড়রা পিকনিক আর বারবিকিউয়ের পরিকল্পনা করে। এমন পরিবেশে শীত যেন শুধুই এক ঋতু নয়, বরং এক মিলনের নাম।

শীতের এই প্রাণবন্ত পরিবেশের বিপরীতে রয়েছে এক করুণ বাস্তবতা। রাস্তার পাশে থাকা অসহায় পথশিশু, ফুটপাতে রাত কাটানো বৃদ্ধ, কিংবা নদীতে আটকে থাকা নাবিকদের কষ্ট আমাদের চোখে পড়ে, কিন্তু আমরা যেন তা উপেক্ষা করেই চলি।

শীতকালের কুয়াশায় ঢাকা নদীতে লঞ্চ আটকে পড়া যাত্রী কিংবা এয়ারপোর্টে আটকে থাকা বিমানের যাত্রীদের মানসিক অবস্থা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। শহরের বিলাসবহুল পিকনিকের আড়ালে, ফুটপাতে রাত কাটানো অসহায় মানুষগুলোকে দেখে অনেকেই তাকানোর প্রয়োজন বোধ করেন না। শীতে জর্জরিত এই মানুষদের জন্য উষ্ণ কাপড় কিংবা একমুঠো খাবার হয়তো তাদের জীবনে অনেক বড় আশীর্বাদ হয়ে আসতে পারে।

সমাজের বয়স্ক মানুষ, যারা দাদু-নানু হিসেবে আমাদের ভালোবাসায় বেড়ে উঠেছেন, তাঁদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব কতটুকু পালন করছি? বৃদ্ধাশ্রমে থাকা বাবা-মায়ের শীতে কী অবস্থা, তা নিয়ে আমরা কি আদৌ চিন্তা করি? পথে-ঘাটে থাকা অসহায় মানুষদের কেউ না কেউ কারও দাদা, নানু, বাবা কিংবা ভাই। কিন্তু আমরা অনেকেই নিজেদের আনন্দে মগ্ন থেকে তাঁদের দুর্দশার দিকে তাকাই না।

শীতকে শুধু আনন্দে সীমাবদ্ধ না রেখে আমাদের উচিত মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ করা। প্রতিবেশীদের দিকে নজর রাখা, ফুটপাতে থাকা অসহায়দের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ করা, এবং সমাজের ছিন্নমূল মানুষের প্রতি দায়িত্ব পালন করা আমাদের সবার নৈতিক কর্তব্য। এমনকি সামান্য একটি কম্বল কিংবা গরম খাবারও কারও মুখে হাসি ফোটাতে পারে।

মানুষ হিসেবে আমাদের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হলো মানবিকতা বজায় রাখা। একজন মানুষ হিসেবে অন্য মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, তাদের কষ্ট বোঝা এবং সাহায্যের হাত বাড়ানো আমাদের মৌলিক দায়িত্ব। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা শীতের তীব্রতা যখন সমাজের অসহায় মানুষদের জীবনে দুর্ভোগ নিয়ে আসে, তখন তাঁদের পাশে দাঁড়ানোই মানবিকতার প্রকৃত রূপ। নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী শীতবস্ত্র, খাবার কিংবা ন্যূনতম সহায়তা দিয়ে আমরা অন্যদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারি। আমাদের বিবেক এবং নৈতিকতাই এ দায়িত্ব পালন করতে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে।

সমাজের সদস্য হিসেবে আমাদের উচিত সমাজে ভারসাম্য ও শান্তি রক্ষা করা। আমাদের চারপাশে যারা অসহায়, ছিন্নমূল, কিংবা সুবিধাবঞ্চিত মানুষ রয়েছেন, তাঁদের সহায়তা করা সামাজিক ন্যায়ের একটি অংশ। শিশু, বৃদ্ধ, এবং অসহায় মানুষের প্রতি আমাদের দৃষ্টি রাখা এবং তাদের প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করা সমাজের প্রতি একটি বড় দায়িত্ব। প্রতিবেশীদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা এবং সংকটে তাদের পাশে দাঁড়ানোও আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। শীতের মতো কঠিন সময়গুলোতে সমাজে একে অপরের প্রতি সংহতি ও সহযোগিতা বাড়ানোর মধ্য দিয়েই আমরা একটি সুন্দর ও সহানুভূতিশীল সমাজ গড়ে তুলতে পারি।

একজন নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের প্রতি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু দায়িত্ব রয়েছে। রাষ্ট্রের নিয়ম-কানুন মেনে চলা, কর পরিশোধ করা এবং সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহযোগিতা করা আমাদের মৌলিক কর্তব্য। তবে নাগরিক হিসেবে আমরা কেবল অধিকার দাবি করলেই হবে না, বরং রাষ্ট্রের দুর্বল ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে ভূমিকা রাখা জরুরি। রাষ্ট্রের উন্নয়নমূলক কাজগুলোতে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং নাগরিক সুবিধাগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করে অন্যদের সহযোগিতা করাই আমাদের দায়িত্ব। শীতের মতো কঠিন সময়গুলোতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগকে সফল করতে আমরা নিজেরাও সহায়তা করতে পারি, যেন প্রতিটি মানুষ মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারে।

শীতকাল আমাদের জীবনে যেমন উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে, তেমনই এটি আমাদের মানবিক দায়িত্ব পালনেরও সুযোগ। সমাজের অবহেলিত মানুষদের প্রতি সহমর্মিতা ও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে আমরা শীতকে সত্যিকার অর্থে উদযাপন করতে পারি। আসুন, নিজেদের আনন্দের সঙ্গে অসহায় মানুষের শীতবিজয়েও অংশ নিই। শীত শুধু আনন্দের নয়, মানবিকতা প্রকাশেরও এক সেরা ঋতু।

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 𝑹𝑻 𝑩𝑫 𝑵𝑬𝑾𝑺 আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট