1. hmonir19799@gmail.com : Hossain Monir : Hossain Monir
  2. rtbdnews@gmail.com : RT BD NEWS : RT BD NEWS
  3. info@www.rtbdnews.com : RT BD NEWS :
রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৫৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
শ্রীলঙ্কাকে ৭৮ রানে হারালো বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ কুতুবদিয়ায় প্রধান শিক্ষকের মামলায় আটকে আছে ৩২ হাজার সহকারী শিক্ষকের পদোন্নতি হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী অরবান দাবি: ইউরোপ ২০৩০ সালের মধ্যে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে ঝিনাইদহে উদযাপিত বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস: স্বাস্থ্যকর মাটির গুরুত্বে আলোচনা ও কুইজ প্রতিযোগিতা ২০২৯ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত থাকবে – ব্রিটিশ হাইকমিশনার ঝিনাইদহে ছোট ভাইয়ের বটির আঘাতে বড় ভাই নিহত দিঘলিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর ভোটার সমাবেশে মাওলানা কবিরুল ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য জামালপুরে বাস চাপায় অটোরিক্সার এক যাত্রী নিহত, আহত ৫ ২০২৭ সালের মধ্যে ন্যাটোর প্রতিরক্ষা দায়িত্ব ইউরোপের নিতে হবে—যুক্তরাষ্ট্রের চাপ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: তফসিল ঘোষণার তারিখ এখনো চূড়ান্ত নয়—ইসি

“ভারতের মুসলিমদের উপর সাম্প্রদায়িক নির্যাতন: মোদির শাসনে ধর্মীয় সহিংসতার প্রকৃতি”

বি এম তাজুল
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
ভারতের মুসলিমদের উপর সাম্প্রদায়িক নির্যাতন

ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আশঙ্কা এবং মুসলিমদের উপর হিন্দুদের অত্যাচারের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠা, এই প্রেক্ষাপটে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে সরকারের মুসলিমদের উপর নির্যাতনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর। বিশেষত, মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি সাম্প্রদায়িক হিংসা, ধর্মীয় স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা, এবং রাষ্ট্রীয় নীতি অনুযায়ী তাদের প্রতি যে নির্যাতন বৃদ্ধি পেয়েছে, তা সমাজে এক গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই প্রতিবেদনে, ভারতে মুসলিমদের নিরাপত্তাহীনতা এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঝুঁকি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

ভারতে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ইতিহাস দীর্ঘ এবং প্রবল। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর, মুসলিমদের বিরুদ্ধে একাধিক সহিংস ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। বিশেষত, ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গা, যেখানে নরেন্দ্র মোদির মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকার সময়ে মুসলিমদের উপর ব্যাপক সহিংসতা পরিচালিত হয়, তা এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিসরে গড়ে ওঠে। দাঙ্গা, ধর্মীয় সংহতি ভাঙার সাথে সাথে, সামাজিক বৈষম্য এবং বৈরিতা উসকে দেয়।

বর্তমানে, ভারতে যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বিরাজ করছে, তাতে আরো একবার সেই দাঙ্গার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। একদিকে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক এবং অপরদিকে ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার প্রবণতা, এ দুটি বিষয়ই সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

ভারতের বর্তমান সরকার বিশেষত নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে হিন্দুদের উপকারে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যা মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যের সৃষ্টি করছে। কয়েকটি এমন ঘটনা আলোচিত হতে পারে, যা মুসলিমদের উপর নির্যাতন এবং অত্যাচারের চিত্র তুলে ধরে:

অনেক জায়গায়, মুসলিম তরুণদের হেনস্থা করা হচ্ছে, এমনকি তাদের উপর শারীরিক অত্যাচারও করা হচ্ছে। ‘লাভ জিহাদ’ বা ‘গোরক্ষা’ এর মতো বিষয়গুলো মুসলিম যুবকদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফলে, মুসলিমরা অনেক ক্ষেত্রে রাস্তায় চলতে গেলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। বেশ কিছু ক্ষেত্রে, মুসলিমদের মসজিদ বা ধর্মীয় স্থানে আক্রমণ চালানো হচ্ছে। কিছু অঞ্চলে, এমনকি তাদের নামাজ পড়তে বা ইফতার করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।

নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (CAA) এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জী (NRC) মুসলিমদের জন্য এক ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। এই আইনগুলির বিরুদ্ধে দেশে ব্যাপক প্রতিবাদ হয়েছে, কারণ এগুলি মুসলিমদের নাগরিকত্বের উপর প্রশ্ন তুলে দেয়। গুজরাটে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এক অন্যতম বড় ঘটনা, যেখানে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ব্যাপক সহিংসতা ঘটেছিল। নরেন্দ্র মোদির মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে এই দাঙ্গা ঘটে, এবং এতে প্রায় এক হাজার মুসলিম নিহত হয় এবং বহু মুসলিম মহিলা ও শিশু নির্যাতিত হয়। এই দাঙ্গা ভারতে মুসলিমদের উপর হিন্দু সহিংসতার একটি শ্বাসরুদ্ধকর উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত হয়।

গোরক্ষা আন্দোলনের নামে মুসলিমদের উপর বিভিন্নভাবে হামলা চালানো হয়েছে। মুসলিমরা যাদের জীবিকায় গরুর মাংস বিক্রি বা পশু পালন জড়িত, তাদের ওপর হামলা ও হত্যার ঘটনা প্রায়ই ঘটেছে। ২০১৫ সালে, ধর্মীয় অজুহাতে, মুবিনুর রহমান ও ইসহাকসহ বেশ কিছু মুসলিম ব্যক্তি গোরক্ষকদের হাতে খুন হন।

‘লাভ জিহাদ’ কথাটি বেশ কয়েকটি অঞ্চলে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়, বিশেষত মুসলিম পুরুষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে যে তারা হিন্দু মেয়েদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলছেন এবং ধর্মান্তরিত করছেন। এর ফলে মুসলিম যুবকদের বিরুদ্ধে হামলা ও সামাজিক শত্রুতা সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় মুসলিমদের মসজিদে নামাজ পড়তে বাধা দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে উত্তর ভারতীয় রাজ্যগুলিতে মসজিদে নামাজ পড়া বা নামাজ চলাকালীন পুলিশ বা স্থানীয় হিন্দু গোষ্ঠী দ্বারা আক্রমণ চালানো হচ্ছে।

২০১৯ সালে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (CAA) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (NRC) প্রতিবাদে ভারতে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়, যেখানে মুসলিমদের নাগরিকত্বের প্রতি আক্রমণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এই আন্দোলনের সময়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে পুলিশি দমন-পীড়ন এবং সহিংসতা বৃদ্ধি পায়। দিল্লির দাঙ্গাতে মুসলিমদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়, মহিলাদের ধর্ষণ করা হয় এবং বেশ কয়েকজন মুসলিম নিহত হন।

বিভিন্ন জায়গায় মুসলিম নারীরা বিশেষভাবে শিকার হয়েছেন, যেখানে ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে তাদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। ২০২০ সালের দিল্লি দাঙ্গায় মুসলিম মহিলারা ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হন। কিছু ঘটনা প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, যেখানে মুসলিম নারীদের ধর্ষণ এবং শারীরিকভাবে নিগৃহীত করা হয়েছে। গুজরাটের বিভিন্ন অংশে মুসলিমদের দোকানপাট, বাসস্থান ও ধর্মীয় স্থাপনায় আক্রমণ চালানো হয়েছে। দাঙ্গার পর, মুসলিমদের সম্পত্তি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে এবং বহু মুসলিম পরিবারের আয়-রোজগার ধ্বংস হয়ে যায়।

মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার মুসলিমদের উপর যেভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে, তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রীয় নীতির সাথে সম্পর্কিত। এই সরকারের লক্ষ্য হিন্দু ধর্মের প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রদান এবং মুসলিমদের প্রতি রাজনৈতিকভাবে আক্রমণাত্মক অবস্থান নেওয়া। মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রচারিত অসত্য অভিযোগ, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা হরণ, এবং ধর্মীয় অধিকারের প্রতি অসম্মান, এসবের মাধ্যমে সরকার নিজের ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে।

ভারতে মুসলিমদের নিরাপত্তাহীনতার অন্যতম প্রধান কারণ হলো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি সহানুভূতি না থাকা এবং তাদের জন্য ন্যায্য অধিকারের প্রাপ্তির বাধা। মোদির সরকার তার প্রচারে বারবার মুসলিমদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মন্তব্য করেছে, এবং সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের অংশগ্রহণ খুবই কম। এমনকি পুলিশও অনেক ক্ষেত্রে মুসলিমদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করে, যা তাদের নিরাপত্তা আরো সংকটময় করে তোলে।

নরেন্দ্র মোদির সরকার হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP) দ্বারা পরিচালিত হয়, যা মুসলিমদের একটি বিরোধী শ্রেণী হিসেবে দেখছে। সরকার এবং তার অনুগতদের পক্ষ থেকে যে ধরনের ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে এবং যে ধরনের ধর্মীয় বিভাজন তৈরি হচ্ছে, তা মুসলিমদের মধ্যে এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা এবং উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। এর ফলে, তারা একটি দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে অনুভব করছেন, যা তাদের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও অধিকারকে দুর্বল করে দিয়েছে।

ভারতের এই সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েও আলোচিত হচ্ছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, জাতিসংঘ, এবং পশ্চিমা দেশগুলোর দ্বারা ভারতকে মুসলিমদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। ভারতীয় সরকার যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করছে, তবুও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিতে দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতি খারাপ অবস্থায় আছে।

ভারতে মুসলিমদের উপর নির্যাতন বাড়ানোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। ২০১৯ সালে CAA এবং NRC এর বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ মিছিল এবং আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল, যা দেশব্যাপী মুসলিমদের স্বার্থ রক্ষা করার প্রচেষ্টা। তবে, সরকারের দমন-পীড়ন এবং আইনি পদক্ষেপের ফলে এই আন্দোলনকে কঠোরভাবে দমন করা হয়েছে। তবে, এই আন্দোলনগুলি মুসলিমদের মধ্যে একটি রাজনৈতিক শক্তি তৈরি করেছে, যা তাদের অধিকার রক্ষায় আরও দৃঢ় মনোভাব সৃষ্টি করেছে।

ভারতের ভবিষ্যতে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের উপর গভীর প্রভাব পড়বে মোদির সরকারের নীতির পরিবর্তন। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং সামাজিক শান্তির জন্য সরকারকে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সহিংসতা এবং ধর্মীয় আক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে, অন্যথায় ভারতে মুসলিমদের নিরাপত্তাহীনতা আরও বাড়বে, যা দেশের সমাজে বিশাল ক্ষতির কারণ হতে পারে।

ভারতের মুসলিমদের উপর নির্যাতন এবং নিরাপত্তাহীনতার পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক শক্তির কারণে মুসলিমরা এক কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ছে, যেখানে তাদের মানবাধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং সামাজিক শান্তি হুমকির মুখে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হলে, ভারত সরকারকে সাম্প্রদায়িক সংহতি রক্ষা এবং সকল নাগরিকের অধিকার সুরক্ষিত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে দেশটি সাম্প্রদায়িক হিংসা থেকে মুক্ত হয়ে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক ও সমতাভিত্তিক সমাজে পরিণত হতে পারে।

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 𝑹𝑻 𝑩𝑫 𝑵𝑬𝑾𝑺 আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট