বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার গোয়ালমাঠ রসিকলাল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জেলা বিএনপির আয়োজিত জনসভা আজ (মঙ্গলবার) বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয়। তবে, প্রশাসন কর্তৃক ১৪৪ ধারা জারির পরেও সভা অনুষ্ঠিত হওয়ায় এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
সকালে জেলা প্রশাসকের কক্ষে বিতর্কের পর এবং ১৪৪ ধারা জারি থাকা সত্ত্বেও জনসভাটি অনুষ্ঠিত হয়। জেলা বিএনপির নেতারা এ সময় প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সভা চলিয়ে যান। তারা জানান, ১৪৪ ধারা জারির পরও তারা জনসভা বন্ধ করবেন না এবং সেখানে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের দূরদূরান্ত থেকে আসতে বলা হয়েছিল, তাই তারা সেখানেই সমাবেশ করবেন।
১৪৪ ধারা অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ওই এলাকায় জনসমাগম, সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ছিল, তবে বিএনপি নেতারা এতে আপত্তি জানান। তাদের দাবি ছিল, সাবেক এমপি এম এ এইচ সেলিমের সঙ্গে সম্পর্কিত দলের ভেতরের বিভাজন এবং প্রশাসনের অসহযোগিতার কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
জনসভা শুরুর আগে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছিল। একদিকে, সাবেক এমপি সেলিমের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান এবং অন্যদিকে জেলা বিএনপির আয়োজিত জনসভা। ১৪৪ ধারা সত্ত্বেও, জেলা বিএনপি তার জনসভা অব্যাহত রাখে এবং পরে মূল সভামঞ্চ থেকে নেমে সাইনবোর্ড বাজারে একটি অস্থায়ী মঞ্চে সভা শেষ করে। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক শামীমুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
জনসভায় প্রধান অতিথি শামীমুর রহমান বলেন, ‘দেশে ষড়যন্ত্র চলছে, তবে আমাদের ঐক্যবদ্ধ চেতনা ইস্পাতকঠিন হতে হবে এবং দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে।’ অন্যান্য বক্তারা ১৪৪ ধারা এবং জেলা প্রশাসক, সাবেক এমপি সেলিমের বিরুদ্ধে সমালোচনা করেন।
এছাড়াও, সকালে জেলা প্রশাসকের কক্ষে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে বিতর্কের ঘটনা ঘটে। বিএনপি নেতারা জেলা প্রশাসকের কাছে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারের দাবি জানালে, সেখানে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বিএনপির নেতারা দাবি করেন, প্রশাসন তাদের সাথে সুষ্ঠু যোগাযোগ না করে একতরফাভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে, সাবেক এমপি সেলিমও একটি সংবাদ সম্মেলনে জানান, ১৪৪ ধারা জারি হওয়ায় তিনি তার সংবর্ধনা অনুষ্ঠান স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি দাবি করেন, ‘আমি দল থেকে পদত্যাগ করলেও বিএনপির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করিনি এবং এখনো জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সদস্য।’
জনসভা চলাকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি ছিলো ব্যাপক, তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিলো। বিএনপি নেতারা আইনশৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকলেও, প্রশাসনের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ ছিলো যে, প্রশাসন দলীয় পক্ষপাতিত্ব করেছে এবং সভার আয়োজন করতে বাধা সৃষ্টি করেছে।
বাগেরহাটে ১৪৪ ধারা সত্ত্বেও বিএনপির জনসভা অনুষ্ঠিত হওয়ায় রাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে। যদিও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি, তবে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে পারে। এই ঘটনাটি স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে এবং সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির পক্ষ থেকে শক্তিশালী প্রতিবাদ দেখা দিয়েছে।